গোটা ভারত জুড়ে হিন্দি ভাষার যে প্রাধান্য রয়েছে, তা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু জানেন কি, কেবল ভারতেই নয়, ভারতের বাইরেও একটি রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিন্দিই? শুধু তাই নয়, সে দেশের অনেক মানুষই আসলে ভারতীয়? ভাবছেন, কোন দেশের কথা বলছি? তাহলে শুনেই নিন।
কিছুদিন আগেই এই দেশ থেকে তার সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। আসলে ভারতের সঙ্গে বরাবরই বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে এই দেশটির। যদিও সে দেশটি ভারতের পড়শি দেশও নয়, এমনকি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পর্যন্ত পড়ে না। কিন্তু ভারতে যেমন একটা বড় অংশের মানুষই কথা বলেন হিন্দি ভাষায়, ভারতের সরকারি ভাষাগুলির মধ্যেও হিন্দি অন্যতম, এই দেশটিতেও ঠিক তাইই। আর শুধু তাই নয়, সে দেশটিতে ভারতের ছোঁয়া রয়েছে আরও নানাভাবেই। এমনকি, দেশটির অনেক মানুষই নাকি আসলে ভারতীয়ই।
ভাবছেন কোন দেশের কথা বলছি? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: বর্ষা নামলেই মাটি থেকে মেলে হিরে, কোথায় রয়েছে এমন রূপকথার রাজ্য?
বলছি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের উপর ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির কথা। ওশিয়ানিয়া মহাদেশের অন্তর্গত এই দেশটিতে সম্প্রতিই সফর সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তখনই ফিজির সর্বোচ্চ সম্মান ‘কম্প্যানিয়ন অফ দ্য অর্ডার অফ ফিজি’-তে সম্মানিত করা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। এই প্রথম ফিজির বাইরের কোনও ব্যক্তিত্বকে সেই সম্মান দেওয়া হয়েছে। আর সেই ফিজিতেই সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে হিন্দি। বর্তমানে এই দেশে তিনটি সরকারি ভাষা রয়েছে। ইংরেজি, ফিজিয়ান এবং ফিজি হিন্দি। আসলে এই দেশের অনেক মানুষই হিন্দিতে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ। ২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ফিজি দ্বীপের মোট জনসংখ্যা মেরেকেটে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার। তার মধ্যে ৩৮ শতাংশ মানুষই হিন্দিভাষী।
আরও শুনুন: একবার গেলে আর ফেরার উপায় নেই! মানচিত্রে না থেকেও ‘জীবন্ত’ জাপানের ভূতুড়ে গ্রাম
এই দেশটিতে প্রচুর মানুষ বাস করেন, যাঁরা আদতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আসলে উত্তর ভারতের হিন্দি বলয় থেকে একসময় কাজের খোঁজে এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে চলে গিয়েছিলেন অনেকেই। অনেকেই কাজ করতেন আখের বাগানে। লখনউ, কানপুর, ফৈজাবাদ, গোরক্ষপুর, গাজিপুর, বালিয়া, সুলতানপুর, শাহবাদ, সিওয়ান থেকে দলে দলে শ্রমিক পাড়ি দিতেন ফিজিতে। দক্ষিণ ভারতের তেলুগু এবং তামিলভাষী কিছু মানুষও ছিলেন সেই দলে। সেই মানুষেরা পরবর্তীতে আর নিজের দেশে ফেরেননি। যে দেশ তাঁদের পেটে ভাত জুগিয়েছিল, সেই দেশকেই নিজের করে নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বংশধরেরাই এখন ফিজির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। ১৯৫৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষেরাই এই দ্বীপে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতাও। ১৯৯৯ সালে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে ফিজির প্রধানমন্ত্রী হন মহেন্দ্র চৌধরী। আর এইভাবেই, এখনও ভারতের ছোঁয়া রয়েই গিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে।