মোবাইল নয়, দামি কোনও কাগজপত্রও নয়, হারিয়েছে তার চেয়েও মূল্যবান এক জিনিস। খোঁজ পেতে জেলাশাসকের দরবারে হাজির দরিদ্র চাষি। তাহলে কি সোনা-দানা, হীরে-জহরত? নাহ না এসব কিছুই না! হারিয়েছে একটা কুয়ো, আস্ত একটা কুয়ো। ব্যাপারটা কি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ছাতা না রুমাল, হারানোর তালিকায় সবার উপরে কার নাম থাকবে? মধ্যপ্রদেশের এই চাষির দাবি, পাতকুয়ো! এমনটাও আবার হতে পারে! আস্ত একটা কুয়ো কখনও হারানো সম্ভব! শুনতে অবাক লাগলেও হয়েছে এমনটাই। সেই নিয়ে হুলুস্থূল কাণ্ড!
ঠিক কী ঘটেছে?
চুরির তালিকায় এর আগেও অদ্ভুতুড়ে জিনিসের নাম শোনা গিয়েছে। কখনও পুকুর, কখনও রেলব্রিজ, কখনও আবার আস্ত একটা বাড়ি চুরি গিয়েছে। তার নেপথ্যে বিশেষ ব্যাখ্যা ছিল। সেসব শোনার পর, অবিশ্বাস্য মনে হয়নি কিছুই। কিন্তু মাটির গভীর অবধি ছড়িয়ে থাকা কুয়ো কীভাবে চুরি যেতে পারে? কেউ চাইলে তা বুজিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু তুলে নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তাও আবার একমাস নয়, দীর্ঘ ছ-মাস ধরে নিখোঁজ একটা আস্ত কুয়ো। ঘটনা মধ্যপ্রদেশের এমনিতে সে রাজ্যের অনেক মানুষ কৃষিনির্ভর। জমিতে ঠিকমতো ফসল হলে তবেই পেটে দানাপানি পড়বে। নাহলে রোজগার বন্ধ। এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি জরুরি জল। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল চাহিদা মেটায়, কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় সেচের জল বলতে কুয়ো কিংবা নদী। নদীতে যে সবসময় জল থাকবে এমন মানে নেই। তাই ক্ষেত্রবিশেষ চাষাবাদের একমাত্র ভরসা ওই পাতকুয়ো। মোটের উপর সে রাজ্যের বেশিরভাগ চাষিই নিজের নামে একটি করে কুয়ো রেখেছেন। সেই জল ব্যবহার করেই চাষ করেন। তা কুয়ো হারিয়ে গেলে বা চুরি গেলে বেজায় বিপদ!
সম্প্রতি এমনই অভিযোগ নিয়ে মধ্যপ্রদেশের বারহানপুর জেলার এক চাষি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিগত ছ-মাস তাঁর কুয়ো নিখোঁজ। কিন্তু কুয়ো তুলে নিয়ে যাওয়া তো কারও পক্ষেই সম্ভব নয়, তাহলে এখানে নিখোঁজ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন ওই চাষি? জানা গেল, ব্যাপারটা একটু আলাদা। ওই চাষি একপ্রকার জালিয়াতির শিকার। না জানিয়েই তাঁর অংশের জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। নিজের কাকার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ এনেছিলেন ওই চাষি। আর সেই জমিতেই ছিল তাঁর সাধের কুয়ো। বিক্রি হয়ে যাওয়া জমি থেকে ওই কুয়ো আর ব্যবহার করতে পারছেন না তিনি। তাতেই সমস্যার পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে তেমন লাভ হয়নি, তাই একেবারে জেলাশাসকের দরবারে হাজির হয়েছেন। সেখানেও অবশ্য ঘটনার সুরাহা হয়নি, তবে প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ওই চাষিকে।