পেশায় খেতমজুর। তবু নিজের সঞ্চয় থেকে ১ লক্ষ টাকা গ্রামের স্কুলে দান করেছেন ব্যক্তি। নেপথ্যে রয়েছে মৃত ছেলের স্বপ্ন পূরণের স্বপ্ন। কী এমন স্বপ্ন দেখেছিল তাঁর ছেলে? আসুন শুনে নিই।
নিজের পড়াশোনা হয়নি। কষ্ট করে মানুষ করেছেন ছেলেকে। বাবার মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখত সেই ছেলেও। ইচ্ছা ছিল, কালেক্টর হওয়ার। কিন্তু সে আশাও পূরণ হয়নি। অকালেই প্রাণ কেড়ে নেয় হার্ট অ্যাটাক। তাই ছেলের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়েছে বাবা। গ্রামের স্কুলের অন্তত একজন পড়ুয়াও কালেক্টর হোক। এমন আশা নিয়েই গ্রামের স্কুলে ১ লক্ষ টাকা দান করলেন ব্যক্তি।
আরও শুনুন: পাহাড় কেটে রাস্তা থেকে ‘নিজস্ব তাজমহল’, প্রেমের জন্য অসাধারণ কীর্তি সাধারণ মানুষের
আত্মারাম সোনভান। মহারাষ্ট্রের ওসামানাবাদ জেলার এক গ্রামে তাঁর বাস। ৬৬ বছরের এই বৃদ্ধ পেশায় একজন খেতমজুর। ক্লাস সিক্সের পর বাধ্য হয়েছিলেন পড়াশোনা ছাড়তে। কিন্তু সন্তানকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে দেননি কখনও। বাবার ইচ্ছামতো পড়াশোনা শিখে, একটি সরকারি চাকরিও পায় তাঁর বড় ছেলে গোপাল। ভবিষ্যতে কালেক্টর হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ছেলের এমন ইচ্ছাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন আত্মারামও। কিন্তু বছর সাতেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় গোপালের। তারপর থেকে ছেলের অধরা স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন আত্মারাম। নিজের ছেলে নেই তো কী হয়েছে, গ্রামের এত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আছে। ভবিষ্যতে তাদেরই মধ্যে কেউ ক্যালেক্টর হোক। ছেলেকে অকালে হারিয়ে এই আশাতেই বুক বাঁধেন আত্মারাম। নিজের জমানো টাকা থেকে প্রায়শই তিনি গ্রামের দুঃস্থ পড়ুয়াদের সাহায্য করতেন। কিছুদিন আগে জানতে পারেন গ্রামের স্কুলে সব পড়ুয়াদের বসার মতো বেঞ্চ নেই। বাচ্চাদের কষ্ট করে মাটিতে বসে পড়াশোনা করতে হচ্ছে দেখে বেশ কষ্ট হয় তাঁর। ঠিক করেন নিজের যাবতীয় সঞ্চয় তুলে দেবেন স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য যাতে বেঞ্চ এবং ডেস্ক তৈরি করা হয় তার জন্য গ্রামের স্কুলে এক লক্ষ টাকা দান করেন আত্মারাম।
আরও শুনুন: নাবালিকা বিয়ের ধুম! বাল্যবিবাহ আইন ভেঙে অসমে গ্রেপ্তার ১৮০০ জন
তবে এই প্রথমবার নয়। আগেও এই স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দান করেছেন তিনি। এমনকী বিশেষ দিনগুলোতে স্কুলে কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হলে, তার খরচও আত্মারামই দেন। এছাড়াও গ্রামের পড়ুয়াদের জন্য নিজের উদ্যোগে তৈরি করেছেন একটি লাইব্রেরি। তবে সামান্য দিনমজুরের কাজ করে এতটাকা কীভাবে দান করেন তিনি? উত্তর শুনলে অবাক হবেন যে কেউ! গ্রামের প্রধানের মতে দৈনিক মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন আত্মারাম। তার মধ্যে খাওয়া পরার জন্য যেটুকু লাগে, শুধুমাত্র সেইটুকুই খরচ করেন তিনি। বাকি সবটাই জমিয়ে রাখেন দান করার জন্য। তিল তিল করে জমানো সেই টাকা দিয়েই গ্রামের পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধা করে দেন আত্মারাম।