কোভিড অতিমারির জেরে আমাদের জীবন পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই। মাস্ক, স্যানিটাইজারের মতো অনেক কিছুই বিগত দুবছর ধরে আমাদের নিত্যসঙ্গী। তার উপর রয়েছে হাজার রকমের কোভিড-বিধি। পড়াশোনা থেকে অফিস-সবটাই উঠে এসেছে ঘরের ভিতর, আমাদের ইন্টারনেট নির্ভরতাও বেড়েছে অনেকখানি। তবে সব পরিবর্তনই কি খারাপ! ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী কিন্তু বলছেন একেবারেই না। তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, করোনা এড়াতে নিত্যসঙ্গী এই মাস্ক কিন্তু মানুষকে ভাল দেখাতেও সাহায্য করছে। কীভাবে? শুনে নিন, কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
করোনা আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই কেড়েছে। যখন তখন যেখানে খুশি বেড়িয়ে পড়ার স্বাচ্ছন্দ্য, সবাই মিলে উৎসবে মেতে ওঠা, ভিড়ে আনন্দ করা- সমস্ত কিছুতেই পুঁতে দিয়েছে ভয়ের কাঁটা। তার উপরে আবার সর্বদা মাস্ক পরার ঝঞ্ঝাট। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সেই আতঙ্ক বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। কোভিডের নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন ইতিমধ্যেই দাপট দেখানো শুরু করে দিয়েছে। শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের বহু দেশেই ছবিটা একই। বারবার মাস্ক পরার উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। বহু জায়গায় মাস্ক পরা নিয়ে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ।
এই মাস্ক পরা নিয়ে আমাদের অনেক রকম অভাব-অভিযোগ থাকলেও ব্রিটেনের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সাইকোলজি বিভাগের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা কিন্তু বলছে অন্য কথা।
এই মাস্কই নাকি মানুষজনকে ভাল দেখাতে সাহায্য করছে আজকাল। আর তা নারী-পুরুষ, উভয়কেই। এদিকে মাস্ক পরলে মুখের অর্ধেকটাই তো ঢাকা থাকে। তবে আবার সুন্দর দেখাবে কী করে! এমনটাই ভাবছেন নিশ্চয়ই। তবে ব্রিটিশ ওই বিজ্ঞানীদল মনে করছেন, ওটাই ইউএসপি। ওই দেখা- না দেখায় মেশানো ব্যপারটিই তো মানুষজনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে। তাঁদের দাবি, নারী-পুরুষ উভয়কেই মাস্ক পরে বেশ ভাল দেখায়।
আরও শুনুন: সংক্রমণ রুখতে কোন ধরনের মাস্ক সবথেকে কার্যকরী? জেনে রাখুন খুঁটিনাটি
অতিমারির আগে পর্যন্ত মাস্ক ব্যবহার করতেন শুধু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে করোনার পরে সেই মাস্কই হয়ে উঠছে সব মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটা জিনিস। এই অতিমারি পর্বে বিপণনের ক্ষেত্রেও কিন্তু একটি বড় সামগ্রী হয়ে উঠেছে মাস্ক। বাহারি রং, বাহারি ডিজাইন, বাহারি কাপড়- বাজারে মাস্কের চাহিদা কিন্তু বেশ বেশি।
তবে ব্রিটিশ ওই বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, মেডিক্যাল ফেসমাস্ক তথা সার্জিকাল মাস্কেই নিজেদের অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে করছে মানুষ। চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত মানুষজনই এই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতেন এতদিন। এই মাস্ক ব্যবহার করে তাঁদের সঙ্গে অনেক বেশি করে একাত্ম হতে পারছে মানুষ। আর এই করোনা-কালীন সময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে জড়িত মানুষজন যে ভাবে প্রতিপদে লড়ে চলেছেন, তা যে কুর্নিশযোগ্য, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। নীল-সবুজ সার্জিকাল মাস্ক পরে সেই মানুষগুলোর যুদ্ধের সঙ্গেও অনেকটা একাত্ম হতে পারছেন সাধারণ মানুষ।
আরও শুনুন: বাহারি কাপড়ের মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোন! ওমিক্রনের বিপদ কিন্তু এতে কাটবে না
ব্রিটিশ ওই বিজ্ঞানীদল নানা ধরনের মাস্কের সঙ্গে ৪০ জন পুরুষকে ওই পরীক্ষায় সামিল করিয়েছিলেন। সেখানে দেখা গিয়েছে, সব চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে নীল রঙের সার্জিকাল মাস্কই। তার পরেই রয়েছে সুতির মাস্ক। মাস্কহীন মুখের তুলনায় সুতির মাস্ক পরিহিত মুখকেই বেশি আকর্ষণীয় মনে করেছেন ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪৩ জন মহিলা। আসলে অতিমারি পর্ব আমাদের মনস্তত্বেও বহু পরিবর্তন এনেছে। এককালে যে মাস্ক ছিল অসুস্থতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, অতিমারির পরে তাই হয়ে উঠেছে প্রতিরক্ষার অস্ত্র। তেমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীদল।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সার্জিকাল মাস্ক অনেক বেশি কাজের বলে আগেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার একবারই ব্যবহারযোগ্য বলে সার্জিকাল মাস্কে হাইজিন বজায় রাখাও সহজ। ফলে সব দিক থেকেই কিন্তু এগিয়ে থাকছে সার্জিকাল মাস্ক। কাজে তো বটেই, আকর্ষনীয় করে তুলতেও নাকি জুড়ি নেই এই মাস্কের। অন্তত ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা তো তেমনটাই হদিশ দিচ্ছে।