একসময় টিভিতে ‘মহালয়া’ বলতে, বাঙালি স্রেফ দূরদর্শনের প্রভাতী অনুষ্ঠানই বুঝত। আর দুর্গা বলতে বুঝত এঁকে। ঠিক ধরেছেন, টেলিভিশনের দুর্গা ড. সংযুক্তা ব্যানার্জির কথা বলছি। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা সুদূর কানাডা। সেখান থেকেই টেলিভিশনে মহালয়ার নেপথ্য কাহিনি তিনি ভাগ করে নিলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন শোনো’-য়। কৈলাস নয়, ভিনদেশ থেকে ফোনে ধরা দিলেন তিনি। ফোনের এপারে শুভদীপ রায়।
মহালয়ার ভোর। বেতারে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। আর দূরদর্শনে ‘দনুজদলনী দুর্গা’। এককালে এই দুই অনুষ্ঠান ছাড়া বাঙালির পুজো শুরুই হত না। বলা ভালো এখনও হয় না। বেতারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর আজও চিরন্তন। তবে দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে অনেক বদল এসেছে। তবু বাঙালির মনে রয়ে গিয়েছেন ড. সংযুক্তা ব্যানার্জি। ঠিক ধরেছেন, দীর্ঘ দশ বছর দূরদর্শনের মহালয়া অনুষ্ঠানে তাঁকেই দুর্গা হিসেবে দেখেছি আমরা।
আরও শুনুন: পুজোয় সারারাত গাড়ি চড়ে ঘোরার প্ল্যান! মোশন সিকনেস হলে কী করবেন?
স্মৃতিচারণায় সেই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁর নানা অভিজ্ঞতা জানালেন সংযুক্তা। নৃত্যশিল্পী হিসেবে দূরদর্শনের এই প্রভাতী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা তাঁর বরাবরের স্বপ্ন ছিল। সেখান থেকে শুধু স্বপ্ন সত্যিই হয়েছিল তা নয়, দীর্ঘদিন মহালয়ার প্রধান চরিত্রেই দেখা গিয়েছে তাঁকে। এখনও মনের মধ্যে সেইসব সোনালি দিনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন বোনেন সংযুক্তা। তিনি জানালেন, কীভাবে পর্দার দুর্গা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন একসময়। মণ্ডপে বা মন্দিরে প্রতিমা দেখে দেবীমূর্তির বিভিন্ন আঙ্গিক বোঝার চেষ্টা করতেন। তবে ক্যামেরার সামনে তাঁকে দুর্গা রূপে সাজিয়ে তুলতেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাতৃরূপে সেজে ওঠেন দেবী, সেই মৃৎশিল্পীরা ছাড়া এই কাজ বোধহয় আর কেউ পারতেনও না। সেইসঙ্গে প্রভাতী অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কারা ছিলেন নেপথ্য নায়ক, তাঁদের অনেকের কথাই উল্লেখ করেছেন সংযুক্তা।
আরও শুনুন: Durga Puja 2023: চাইনিজ-মোগলাই নয়, নিখাদ বাঙালি খাবারেই হোক পুজোয় পেটপুজো
শোনালেন শ্যুটিং-এর মজার কাহিনিও। একবার নাকি, তাঁর গদার মারে রেগে গিয়ে ফ্লোর ছেড়েই চম্পট দিয়েছিলেন মহিষাসুর। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়। একইসঙ্গে উঠে এল, আজকের মহালয়ার কথাও। এখন তো একাধিক চ্যানেলে মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়। সেসব কি সংযুক্তা দেখেন? উত্তর এল, অবশ্যই দেখেন। ইন্টারনেটের দৌলতে সবকিছুই তিনি দেখার চেষ্টা করেন বলেই জানিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে কোনও একজন অভিনেত্রীকেই সেরার তকমা দিতে চাননি সংযুক্তা। তুলনা টানতে চাননি নিজের সঙ্গেও। তাঁর কথায়, তাঁর সময় যে ভঙ্গি বা নৃত্যশৈলী মহালয়ার অনুষ্ঠানে দেখা যেত, এখন তা অনেকটাই বদলেছে। তাই দুয়ের তুলনা টানা কখনোই উচিত না। অন্যদিকে, তাঁর ছবি ব্যবহার করে নেটদুনিয়ায় যে মিম বা ট্রোল কালচার চলে, তারও তীব্র বিরোধিতা করেছেন টেলিভিশনের ‘দুর্গা’। তবে সত্যিই যদি তিনি দেবী হতেন, বা দুর্গার সব ক্ষমতা তাঁর মধ্যে থাকত, তবে সমাজকে অন্যরূপে গড়তেন সংযুক্তা। এমনটা হলে, সমাজে সবার মন থেকে সবরকমের কলুষতা মুছে দিতেন বলেই জানিয়েছেন তিনি।