‘ধূম টু’ ছবির সেই বিখ্যাত চুরির দৃশ্যগুলি ভোলেননি নিশ্চয়ই। যেখানে রোবটের মতো ছোট্ট একফালি যন্ত্রাংশের মাধ্যমে নিমেষে লুঠ হয়ে গিয়েছিল বহুমূল্য একটি হিরে। তার জায়গায় চোর লাগিয়ে এসেছিল সেই হিরেরই একটি হলোগ্রাম। আশ্চর্য সেই যন্ত্রাংশটি দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়নি এমন দর্শক কমই ছিলেন। এবার তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি রোবট আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। যা নাকি আদতে মাছির চেয়েও ছোট। কেমন দেখতে সেই রোবট, আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যুগটাই তথ্যপ্রযুক্তির। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের জীবনের বড় অংশই কাটে যন্ত্রের নির্ভরতায়। আর এখন তো তা বেড়ে গিয়েছে আরও কয়েকগুণ। ইদানীং রিমোটের বোতামে চাপ দিয়ে এমনকি মৌখিক নির্দেশেও ঘরে আলো জ্বালা থেকে গান চলা, সবটাই আমরা সেরে ফেলতে পারি চোখের নিমেষে। আর এ সমস্তটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা এআই-এর কামাল। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম আবিষ্কারই হচ্ছে রোবট। প্রথম থেকেই এই রোবট ঘিরে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান, দক্ষ এই যন্ত্রাংশকে আরও আধুনিক করে তুলতে দিনরাত এক করে দিচ্ছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী।
আর সময়টাই যেখানে ন্যানো টেকনোলজির, সেখানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্ষুদ্রতর রোবট বানানোয় মন দিয়েছেন অনেক প্রযুক্তিবিদই। সম্প্রতি আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে ফেলেছেন তেমনই একটি ন্যানো রোবট। যাকে শুধু ক্ষুদ্র বললে ভুল বলা হবে। আকারে নাকি সেটি মাছির থেকেও প্রায় অনেকটাই ছোট।
আরও শুনুন: পাঁচ হাজার শীত-বসন্ত দেখেছে এ গাছ! খোঁজ মিলল পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃক্ষের
শুনতে অবাক লাগলেও তেমনই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারদের দলটি। মাইক্রোস্কেলিক রোবটিকস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন তাঁরা। নুন বা বালির একটি দানার আকারের এই রোবটটি দেখতে অনেকটাই কাঁকড়ার মতো। মুখের কাছে রয়েছে কাঁকড়ার মতোই অবিকল একজোড়া দাঁড়া। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র উড়ন্ত রোবটও। না, ইঞ্জিনের সাহায্যে নয়, বরং বাতাসের সাহায্যেই উড়তে পারবে সেটি। শুধু ওড়াই নয়, হাঁটা, ঘোরা, বাওয়া, লাফানো এমনকি মুচড়ে যাওয়ার মতো একাধিক রকমের মুভমেন্ট করতে পারে এটি। তা-ও আবার কোনওরকম ইঞ্জিন বা হাইড্রোলিক সিস্টেম ছাড়াই।
এখানেই শেষ রয়। এই রোবটের বিশেষত্বের তালিকা বেশ লম্বা। বিশেষ এক ধরনের মিশ্র ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রোবটটি। যা উত্তাপের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলতে পারে নিজের আকার। রোবটটির বাইরের স্তরে বিশেষ এক ধরনের কাচের আবরণ ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। যা উত্তাপ কমলে আসল আকারে ফিরতে সাহায্য করবে রোবটগুলিকে। পাশাপাশি এই রোবটটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্ক্যানিং লেজার প্রযুক্তির। রিমোটের পাশাপাশি রোবটটিকে ঠিক দিকে পরিচালনা করা যাবে যার সাহায্যে।
আরও শুনুন: পৃথিবীর শুষ্কতম মরুভূমিতে আঙুর ফলিয়ে তাক লাগালেন বৃদ্ধ
ভাবছেন নিশ্চয়ই, এত প্রাণী থাকতে শেষমেশ কাঁকড়াকেই কেন মনে ধরল বিজ্ঞানীদের। না, তার কোনও বিশেষ কারণ বলতে পারেননি তাঁরা। সম্ভবত কাঁকড়ার হাঁটাচলা থেকে অনুপ্রাণীত হয়েই রোবটটিকে এমন বানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যে নতুন প্রযুক্তিতে তাঁরা এই রোবটটি বানিয়েছেন, তার দ্বারা যে কোনও আকার ও আয়োতনের রোবট বানানো সম্ভব বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীদের দলটি।
বহু ক্ষেত্রেই এই আবিষ্কার বৈপ্লবিক হয়ে উঠতে পারে বলে দাবি তাঁদের। বিশেষত মেডিক্যাল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে তো বটেই। ক্যানসারাস টিউমার অপসারণে হোক বা হার্টের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে, তা হয়ে উঠতে পারে ম্যাজিকাল উপকরণ। সম্প্রতি সায়েন্স রোবোটিকস নামক একটি জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে তাঁদের এই গবেষণা। ১ মিলিমিটারেরও কয়েক গুণ কম আয়তণের এই যন্ত্রাংশটি রোবোটিকসের দুনিয়ায় বিপ্লব ডেকে আনবে বলেই বিশ্বাস আবিষ্কর্তাদের। আর আপাতত সেই দিকেই চেয়ে রয়েছেন তাঁরা।