একদিকে প্যালেস্তাইনের সঙ্গে যুদ্ধ, অন্যদিকে যুদ্ধ লেবাননের সঙ্গে, এর মাঝেই ইরানের সঙ্গে সংঘাত- সব মিলিয়ে ইজরায়েল জুড়ে এখন কেবল বারুদের গন্ধ। যুদ্ধের জেরেই বারেবারে খবরের শিরোনামে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশ। কিন্তু জানেন কি, একসময় এই দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা ছিল খোদ আইনস্টাইনের? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীর শিরোপা দেওয়া হয় যাঁকে, সেই আলবার্ট আইনস্টাইন জন্মসূত্রে ইহুদি। ইহুদিদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবিরও পক্ষেই ছিলেন তিনি। আর ইহুদিদের সেই পৃথক রাষ্ট্র, ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ারই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু আন্দোলনের প্রতি সমর্থন থাকলেও সেদিন ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হতে রাজি হননি আইনস্টাইন।
অথচ, ইহুদি পরিচয়ের দৌলতেই দেশ ছাড়তে হয়েছিল আইনস্টাইনকে। হিটলারের নীতি মেনে যেভাবে জার্মানি থেকে একের পর এক সেরা মনীষাকে কার্যত বিতাড়িত করা হচ্ছিল, আইনস্টাইন তা মেনে নিতে পারেননি। হিটলারকে রোখার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখতেও তাই আপত্তি ছিল না তাঁর। ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎসিদের হাতে ক্ষমতা উঠলে দেশত্যাগী হন আইনস্টাইন। পরে আমেরিকার নাগরিক হিসেবেই জীবন কাটিয়েছেন তিনি। জার্মানি ছাড়ার পর, সেখান থেকে ইহুদি বিজ্ঞানীদের বের করে আনা ও মার্কিন গবেষণাগারে তাঁদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারেও তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন একাধিকবার। তাঁর আমেরিকায় থাকার সময়েই, ১৯৫২ সালে ইজরায়েলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চাইম উইজম্যানের মৃত্যু হয়। সেসময় আইনস্টাইনকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেন ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন।
এমনিতে ইজরায়েলে প্রেসিডেন্ট পদটি সাংবিধানিক পদ মাত্র। প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলান প্রধানমন্ত্রীই। ফলে একরকম সাম্মানিক হিসেবেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল আইনস্টাইনকে। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে বেন-গুরিয়ন জানিয়েছিলেন, মুখরক্ষার সুবাদেই এই প্রস্তাব দেওয়া, আপনভোলা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্রস্তাবে রাজি হলে তা আদৌ সুবিধাজনক হবে না। আইনস্টাইন অবশ্য প্রস্তাবে রাজিও হননি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি জানান, নীতিগতভাবেই তিনি এই পদ নিতে রাজি নন। উপরন্তু বয়সের কারণেও এহেন গুরুদায়িত্ব নিতে তিনি প্রস্তুত নন।
জন্মসূত্রে ইহুদি তো বটেই, নিজের কাজেও বারেবারে ইহুদিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আইনস্টাইন। নাৎসিদের ইহুদি হত্যার বিরুদ্ধে যেমন সরব হয়েছেন, তেমনই ইহুদিদের নিজেদের দেশ চাওয়ার পক্ষেও তিনি সমব্যথী ছিলেন। তবে পৃথক ইহুদি রাষ্ট্রের সমর্থক হলেও, প্যালেস্তাইন থেকে আদি বাসিন্দাদের উৎখাত করার এবং প্যালেস্তাইনের বিভাজন ঘটানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন আইনস্টাইন। ১৯৩৮ সালে নিউইয়র্কে ন্যাশনাল লেবার কমিটি ফর প্যালেস্তাইনের ভাষণে সে কথা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সংকীর্ণ জাতীয়বাদী ভাবনা যে আদতে ক্ষতিই করে, সে কথা তিনি জানতেন। ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের নেপথ্যে আইনস্টাইনের এই বিবেকবোধই কাজ করেছিল বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
বর্তমানে একের পর এক যুদ্ধের জেরে খবরের শিরোনামে ইহুদিদের সেই দেশ, ইজরায়েল। আবার আইনস্টাইনের নামও কিন্তু জড়িয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরমাণু বোমার সঙ্গে। যদিও যুদ্ধপন্থী নন, বরং পরবর্তী কালে বারবার শান্তির পক্ষেই সওয়াল করেছেন আইনস্টাইন। কে বলতে পারে, সেদিন আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব মেনে নিলে আজকের দিনে কোন পথে হাঁটত ইজরায়েল!