সোনার শহর। সে তো বলা হত এল ডোরাডোকে। সেই সোনার শহরের খোঁজে কত ভাগ্যান্বেষীরা যে হারিয়ে গিয়েছেন কালের অন্ধকারে, তার ইয়ত্তা নেই। সত্যি কি কোনও দিন এল ডোরাডোয় ছিল সোনার নগরী। কে জানে। তবে মিশরে যে ছিল, সেই ব্যাপারে সিলমোহর দিয়েছেন বিজ্ঞানী। সম্প্রতি তিন হাজার বছর আগের সোনার শহরের হদিস পেয়েছেন তাঁরা। কী ছিল সেখানে? শুনে নিন।
কোনও এককালে একদল মানুষ সেখানে জোট বেধেছিলেন। তাঁদের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল নগর। সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে জন্ম দিয়েছিলেন সভ্যতার। কালের নিয়মে সবই একদিন শেষ হয়। সেই নগরও ঘুমিয়ে পড়েছিল মাটির অতলে। তবে যা যায়, সে কি একেবারেই যায়! আমরা তো জানি, রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে। ঠিক তেমন ভাবেই মাটির তলায় থেকে গিয়েছিল তিন হাজার বছর আগের শহর।
কিছু দিন আগে মিশরের একদল পুরাতত্ববিদের হাত ধরে ফের আলোর মুখ দেখেছে তিন হাজার বছর আগের সেই স্বর্ণনগরী। মিশরের লাক্সার নদীর ধারে সম্প্রতি হদিস মিলেছে ঘুমিয়ে থাকা সেই নগরজীবনের।
আরও শুনুন: মাটি খুঁড়তেই যেন কথা বলে উঠল ইতিহাস… সন্ধান মিলল ১৫০০ বছরের পুরনো মন্দিরের
সোনার পাথরবাটির মতোই এ নগরও আদৌ সোনা নামক ধাতুর তৈরি কিনা তা জানা নেই। তবে ঐতিহাসিক মূল্যের দিক দিয়ে দেখতে গেলে এ সত্যিই সোনার আবিষ্কার। ২০২০ সাল নাগাদ এক দল পূরাতাত্বিক লাক্সার নদীর ধারের ওই জায়গাটিতে জড়ো হন। দৈনন্দিন গবেষণার কাজে খনন করতে করতেই তাঁদের হাতে উঠে এসেছিল এ অমূল্যধন। আসলে তাঁরা এসেছিলেন রাজা তুতেনখামেনের সমাধি সংলগ্ন একটি মন্দিরের খোঁজে। তবে তার বদলে হাতে উঠে আসে অন্য ইতিহাস।
পরে ওই গবেষকদের অন্যতম জাহি হাওয়াস নামে এক পূরাতত্ববিদ জানান, উদ্ধার হওয়া ওই শহর আসলে মিশরের হারিয়ে যাওয়া স্বর্ণ শহর। যার নাম অটেন। মনে করা হয়, প্রাচীন মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের রাজা তৃতীয় আমেনহোতেপ ওই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এককালে সেই শহরই ছিল নাকি সুশাসন আর শিল্পের পীঠস্থান। সম্ভবত যে সময় এ শহর গড়ে উঠেছিল, সে সময় সম্পদের দিক থেকে শীর্ষে ছিল ওই রাজত্ব। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার একেবারে অন্যরকম একটা দিক তুলে আনতে পারে এই আবিষ্কার। সে সময়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবন, যাপন, খাদ্যাভাস, ব্যবহার্য জিনিসপত্র- সব কিছু নিয়েই ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে এই স্বর্ণ শহরের খোঁজ।
আরও শুনুন: অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক মাছ! আশ্চর্য মমি দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিজ্ঞানীদের
গবেষকেরা জানিয়েছেন, দিব্যি ভাল অবস্থায় রয়েছে ওই খুঁজে পাওয়া শহর। বেশিরভাগই দেওয়ালই রয়েছে আস্ত। সেখানকার ঘরগুলিতে বেশ কিছু ব্যবহারের জিনিসপত্রও মিলেছে। মিলেছে মাটির পাত্র, গয়নাগাটি, ইটের মতো অনেক কিছুই। বালির তলায় নাকি এত দীর্ঘ সময় ধরে চাপা পড়েছিল গোটা শহরটাই।
এই স্বর্ণশহরের বিষয়ে আরও জানতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকেরা। তুতেনখামেনের সমাধির পরে এত বড় আবিষ্কার মিশরে আর হয়নি বলেই বিশ্বাস প্রত্নতত্ত্ববিদদের। এই আবিষ্কার মিশরের ইতিহাসের আরও নতুন দরজা খুলে দেবে বলেই আশা তাঁদের।