প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। বিশেষত কেজরিওয়ালের আপ। সম্প্রতি জেলবন্দি আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়াও সে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিতর্কের আবহেই বরং শুনে নেওয়া যাক দেশের অতীত প্রধানমন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা।
দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে কি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যিক? এরকমকোনও মানদণ্ড আছে কি? উত্তরে বলতে হয়, না সেরকম কোনও ‘এলিজিবিলিটি ক্রাইটেরিয়া’ নেই। যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তাঁকে অবশ্যই দেশের নাগরিক হতে হবে। এবং রাজ্যসভা বা লোকসভার সদস্য হতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিতেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকলেও দেশের প্রধানমন্ত্রীদের শিক্ষা অবশ্য সমীহ জাগানোর মতোই।
আরও শুনুন: হিন্দু হয়েও ‘আম্মি’ ‘আব্বু’ বলতে শিখছে সন্তান, পাঠ্যবই নিষিদ্ধ করার দাবি মা-বাবার
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে ন্যাচরাল সায়েন্সেস নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীতে আইন নিয়েও তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তাঁর পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। বারাণসীর মহাত্মা গান্ধী কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এরপর দেশ পায় প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর পড়াশোনার তালিকা বেশ দীর্ঘ। তিনি বিশ্বভারতীতেও পড়াশোনা করেছিলেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আধুনিক ইতিহাস নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন পর্বে নান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নান বিষয়েরই পাঠ নিয়েছেন তিনি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই প্রথম জীবনে পড়াশোনা করেন সেন্ট বুসার হাই স্কুলে। পরবর্তীতে তৎকালীন বম্বে ইউনিভার্সিটির উইলসন কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি পান।
আরও শুনুন: মাসে আয় হাজার দশেক, ছাপোষা দোকানির ১২ কোটির লেনদেনের আয়করের নোটিশ, তুঙ্গে বিতর্ক
খুব অল্প সময়ের জন্যই প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন চরণ সিং। তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক। আগ্রা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। আইন নিয়েও পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ইন্দিরার মৃত্যুর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা-তনয় রাজীব গান্ধী। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েও তিনি পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি দিল্লি ফ্লাইং ক্লাব থেকে পাইলট হওয়ারও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন রাজীব। এর পর বছর খানেক সময়কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। পুনে ইউনিভার্সিটির ফার্গুসন কলেজ থেকে তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হয়েছিলেন। পরে এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন আইন নিয়ে। বছরখানেকেরও কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্র শেখর। তিনি এলহাবাদ ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেছিলেন হিউম্যানিটিজ নিয়ে। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী। স্নাতক স্তরে হিন্দি, ইংরেজি ও সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতকোত্তর স্তরে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। দেশের একাদশ তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এইচ ডি দেবগৌড়া। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ শিপ্লোমা করেছিলেন তিনি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল বাণিজ্যে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন। তিনি পিএইচডি-ও করেছিলেন।
আরও শুনুন: ‘আপনি কি বিবাহিত?’ যোনির মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে তরুণীরা
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হন ড. মনমোহন সিং। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন অর্থনীতি নিয়ে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর স্তরে তিনি অর্থনীতিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। পরবর্তী কালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তিনি এই নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন ও গবেষণা করেন। দেশের অন্যতম শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গণ্য করা হয় তাঁকে।
এর পরে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। তিনি দিল্লি ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ওপেন লার্নিং থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তবে এ নিয়ে বিতর্ক আছে বলেই দাবি করেন অনেকে।