কেবল মানুষই নয়, চাকরি করে হাঁসেরাও। নির্দিষ্ট সময় ধরেই অফিসে হাজিরা দিতে হয় তাদের। পায় নিয়মিত বেতন, এমনকি উপরি বোনাস আর বার্ষিক ছুটিও। সব মিলিয়ে দিব্যি আনন্দেই চাকরি সামলায় এই হাঁসের দল। কোথায় রয়েছে তাদের এই বিশেষ অফিস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হাঁসেরাও নাকি চাকরি করে! শুনে ভাবছেন তো, এসবই আসলে আজগুবি গল্প? আজ্ঞে না। একেবারেই সত্যি কথা। একটি দুটি নয়, হাজার হাজার হাঁস চাকরি করে দক্ষিণ আফ্রিকার এই অফিসে। তবে হ্যাঁ, তাদের অফিসটি কোনও চার দেওয়ালে বন্ধ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরা নয় মোটেই। বরং খোলা আকাশের নিচে খোলা মাঠেই অফিস বসে তাদের। আর রোজ ভোর হতে না হতেই দেখা যায় রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে অফিস পানে এগিয়ে চলেছে কয়েক হাজার হাঁসের মিছিল। তাদের হাঁকডাকের জোরে চারিদিক সরগরম। হাবভাবে অফিসের ব্যস্ততাও দিব্যি বুঝিয়ে দেয় তারা।
আরও শুনুন: এ গ্রামের কুকুরেরা নাকি কোটি টাকার মালিক! ভারতের কোথায় রয়েছে এই গ্রাম?
কিন্তু অফিসের কাজ কীভাবে সামলায় এই হাঁসের দল? ঠিক কী কাজ-ই বা করতে হয় তাদের?
আসলে দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে অন্যতম হল ওয়াইন উৎপাদন। বিশ্বের ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ তিনেক মানুষের কর্মসংস্থান করে এই শিল্প। আর সেখানেই, মানুষের পাশাপাশি নিয়োগ করা হয়েছে একাধিক হাঁসকেও। বলা ভাল, মানুষের সহকর্মী হিসেবেই কাজ করে চলে এই হাঁসবাহিনী। আসলে ওয়াইন উৎপাদনের জন্য এই মহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে বিস্তীর্ণ আঙুরখেত। এদিকে ফসল ভাল হওয়ার জন্য একদিকে যেমন সারের প্রয়োজন, অন্যদিকে আবার কীটনাশক ব্যবহার না করেও উপায় নেই। আর এইখানেই, কোনও রাসায়নিকের বদলে হাঁসদের কাজে লাগানোর কথা ভেবেছেন একটি ওয়াইন কারখানার মালিক। কেপটাউন শহরের ওয়াইন এস্টেট ভেরজেনয়েড লো-তে চাকরি করে এই হাঁসবাহিনী। এই এস্টেটের আওতায় থাকা প্রতিটি আঙুর খেত অর্থাৎ ভাইন ইয়ার্ডগুলিতে কাজ করে প্রায় ১৬০০-রও বেশি হাঁসের পরিবার, অর্থাৎ বেশ কয়েক হাজার ডানাওয়ালা শ্রমিক। আঙুর খেতের কীটপতঙ্গ দূর করতে এই হাঁসদের উপরেই ভরসা করেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সকালবেলায় মাঠে নেমে পড়ে তারা। তারপর মাটি থেকে খুঁজে খুঁজে কীটপতঙ্গ খেয়ে চাষের জমি সাফ করে এই হাঁসের দল। পাশাপাশি সারের কাজও করে তাদের মল-মূত্র। ফলে রাসায়নিক সারও বিশেষ ব্যবহার করেন না এই ওয়াইন এস্টেটের কর্তৃপক্ষ। বিনিময়ে বিশেষ প্রোটিনযুক্ত খাবার মেলে তাদের। এই নিয়মিত বেতন ছাড়া, উপরি হিসেবে আঙুরখেতের সেরা আঙুরের কিছুটা বরাদ্দ করা হয় তাদের জন্যই। আর ফসল কাটার মরশুমে মেলে এক মাসের লম্বা ছুটি।
আরও শুনুন: পুত্রসন্তান চাই, তান্ত্রিকের কথায় বধূকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে স্নান করাল পরিবার
এই কর্মী হাঁসেরা সকলেই ‘ইন্ডিয়ান রানার ডাক’ প্রজাতির। এই বিশেষ প্রজাতির হাঁসগুলি সহজে পোষ মানে। আবার কাজের ক্ষেত্রেও তারা বেশি পারদর্শী বলেই জানিয়েছেন তাদের নিয়োগকর্তারা। সুতরাং তাদের কাজে লাগিয়েই দূষণমুক্ত ফসল উৎপাদনের পথে হাঁটছে দক্ষিণ আফ্রিকা।