নয়া ইতিহাস গড়ল ভারত। প্রথমবার দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে নির্বাচিত হলেন আদিবাসী সমাজের কোনও প্রতিনিধি। তার উপরে তিনি মহিলা। সব মিলিয়ে প্রথমবার আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি পেল দেশ। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সফল এই নেত্রীকেও ব্যক্তিগত জীবনে কম বাধাবিপত্তি পেরোতে হয়নি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন সাফল্যের আলোয় ভরা। যদিও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই উঠে এসেছেন আদিবাসী পরিবারের কন্যা দ্রৌপদী মুর্মু। এমনকি এনডিএ’র তরফে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে তাঁর আদি বাড়ির গ্রামে বিদ্যুৎসংযোগও ছিল না। কিন্তু সেই অন্ধকার ছায়া ফেলতে পারেনি তাঁর রাজনৈতিক উত্থানে। প্রথম জীবনে শিক্ষিকা থেকে পরবর্তী কালে মন্ত্রী, তারপর রাজ্যপালের দায়িত্বও দক্ষ হাতেই সামলেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। কিন্তু এই আলোকিত বৃত্তের আড়ালে ঠিক কেমন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন? সেই জীবনে কম আঘাত পাননি দ্রৌপদী। যেন মহাভারতের দ্রৌপদীর মতোই, পুত্রশোকের মুখোমুখি হয়েছেন আধুনিক ভারতের এই দ্রৌপদীও। পরপর হারিয়েছেন দুই ছেলেকেই। কেবল সন্তানশোকই নয়, স্বামীকেও হারিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: রাজনৈতিক জীবনে বহু বড় সিদ্ধান্ত একুশের মঞ্চ থেকেই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দুই ছেলের মৃত্যুর শোক সহ্য করতে হয়েছিল দ্রৌপদী মুর্মুকে। শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে বিয়ের পর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই ছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু ২০০৯ সালের এক সকালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় দ্রৌপদীর বড় ছেলে লক্ষ্মণের। ঘটনাচক্রে মায়ের সঙ্গে রায়রংপুরে নয়, তখন পত্রপড় এলাকায় তাঁর কাকার বাড়িতে থাকছিলেন ২৫ বছরের লক্ষ্মণ মুর্মু। সেদিন সকালে তাঁকে বিছানায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল, আগের রাতে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটি রেস্তরাঁয় নৈশভোজনে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বন্ধুরাই তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন। দাবি করা হয়, রাতে বাড়ি ফেরার সময় লক্ষ্মণের মাথায় আঘাত লাগে। কিন্তু ময়নাতদন্তের সময় কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই লক্ষ্মণের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ ধোঁয়াশা হয়েই থেকে গিয়েছে। বলাই বাহুল্য, এই অঘটন দ্রৌপদীর ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় তুলেছিল। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, প্রকৃতপক্ষে আরও একাধিক ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল এ ঘটনা। লক্ষ্মণের মৃত্যুর তিন বছর কাটতে না কাটতেই পথদুর্ঘটনায় দ্বিতীয় পুত্রকেও হারান দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৪ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তাঁর স্বামী শ্যামচরণ মুর্মুও।
আরও শুনুন: ‘জোর করে’ খুলে নেওয়া হল দুই দলিত ছাত্রীর পোশাক, যোগী রাজ্যে কাঠগড়ায় খোদ শিক্ষিকা
আপাতত দ্রৌপদীর জীবনে একমাত্র সম্বল তাঁর কন্যা, ইতিশ্রী। পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী ইতিশ্রী গণেশ হেমব্রম নামে এক রাগবি খেলোয়াড়কে বিয়ে করেন। এক কন্যাও রয়েছে তাঁদের।
ব্যক্তিগত জীবনের সব ঝড়ঝাপটা সামলেই রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক হার্ডল পেরিয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল হিসাবে শপথ নেন তিনি। ২০১৭ সালেও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম উঠে এসেছিল। অবশেষে চলতি বছরে রাইসিনা হিলের মসনদে বসলেন এই আদিবাসী নেত্রী।