স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার বিজ্ঞাপন, অথচ সেই বিজ্ঞাপনে ‘স্তন’ শব্দের উল্লেখ থাকবে না? বদলে থাকবে এমন কিছু, যা যৌন ইঙ্গিত নিয়েই ব্যবহৃত হয়! এই ইস্যুতেই ক্যানসার সচেতনতার বিজ্ঞাপন নিয়ে আপত্তি জানালেন এক চিকিৎসক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বন্ধুদের আড্ডায় উঠে এল কোনও ফলের নাম। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলের মুখে চটুল হাসি। কেন-না ওই ফলের নামে আসলে বোঝানো হয়েছে কোনও না কোনও যৌন অঙ্গকে। ওই অঙ্গের আকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই বিশেষ বিশেষ ফল বা সবজিকে যৌন অঙ্গগুলির সমার্থক করে তোলা হয়। আর বন্ধুমহলে এমন যৌনগন্ধী ইশারার আদানপ্রদান হয়েই থাকে। কিন্তু সেই একই ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হবে কোনও বিজ্ঞাপনেও? তাও আবার যে বিজ্ঞাপন স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে! এহেন বিজ্ঞাপন দেখেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এক চিকিৎসক।
ঠিক কী ছিল বিজ্ঞাপনটিতে?
দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞাপনে রয়েছে কোনও একটি গণপরিবহণের ছবি। নানা বয়সের একাধিক মহিলা বসে রয়েছেন সেখানে। সামনে এক বাক্স কমলালেবু। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণী দুটি কমলালেবু হাতে তুলে নিয়েছেন, যেন পরখ করতেই। এই ছবির নিচের ক্যাপশন বলছে, চেক ইয়োর অরেঞ্জেস, ওয়ান্স আ মান্থ। অর্থাৎ, প্রতি মাসে অন্তত একবার যেন স্তন পরীক্ষা করেন নারীরা, সে কথাই বলা হয়েছে। নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে ধরনের ক্যানসার, তা ব্রেস্ট ক্যানসার। তবে দ্রুত রোগ নির্ণয় করা গেলে তাতে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। সে কারণেই ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতে গেলে নারীদের নিয়মিত পরীক্ষার কথা বলা হয়। ডাক্তারদের বলে দেওয়া পদ্ধতিতে নিজের স্তনে হাত রেখে মহিলারা নিজেরাই পরীক্ষা করে নিতে পারেন, কোথাও কোনও উপবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে কি না। অন্তত এই প্রাথমিক পরীক্ষাটুকু সব নারীরই নিয়মিত করা জরুরি, বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু সেই সোজা কথাকে সহজ ভাবে না বলে স্তনের সঙ্গে কমলালেবুর উপমা টানাতেই চটে গিয়েছেন ওই চিকিৎসক। দিল্লি মেট্রোয় যাতায়াতের সময় ওই বিজ্ঞাপনটির মুখোমুখি হন চিকিৎসক জয়সন ফিলিপ। তাঁর বক্তব্য, স্তন শব্দের ব্যবহার নিয়ে ছুঁতমার্গ থাকবে কেন, তাও যখন স্তনের ক্যানসার প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে? আর ছুঁতমার্গের জেরে যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে, তা তো আরও বেশি করে যৌনগন্ধী। সত্যি বলতে, সুডৌল আকারের ইঙ্গিত দিতেই এই উপমা টানা হয়। কিন্তু স্তন ক্যানসার এমনই এক রোগ, যেখানে কর্কটের আক্রমণে সেই সুডৌল গড়ন ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। অনেক নারীর ক্ষেত্রেই এমনকি অস্ত্রোপচার করে স্তন বাদ দিতেও হয় এই রোগে। শুধু সেইটুকুই নয়, তাঁর মায়ের এই রোগেই মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে, জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। সুতরাং যে যৌন দৃষ্টিতে নারীদেহের এই অঙ্গকে দেখা হয়, সেই যৌন ইঙ্গিতকে রোগের ক্ষেত্রে টেনে আনায় আপত্তি জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।
যুবরাজ সিং-এর সংস্থা ‘ইউ উই ক্যান’-এর তরফে এই বিজ্ঞাপনের পোস্টারটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্যানসারজয়ী যুবরাজ ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই সংস্থা শুরু করেন। ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মান্থ হিসেবে পরিচিত অক্টোবরে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সচেতনতার বার্তা দিতে চেয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু তার প্রকাশের ভাষা নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করছেন নেটিজেনদের একাংশ।