বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে কমছে সম্পর্কের উষ্ণতা। বেড়েই চলেছে বিচ্ছেদের হার। ইদানীং নাকি প্রায়ই ডিভোর্সের পথ বেছে নিচ্ছে আলবাট্রসরা। আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে পরিবেশবিদদের। সাধারণ ভাবে এঁরা কিন্তু মনোগ্যামি। সারাটা জীবন একই সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পছন্দ করে সামুদ্রিক এই বিশালাকার পাখিটি। তবে কেন প্রেমে ফাটল? শুনে নিন।
তারকা থেকে শুরু করে চেনাশোনা মহল। কান পাতলেই আজকাল এদিক-সেদিক থেকে ভেসে আসে বিবাহবিচ্ছেদের খবর। না, আলবাট্রসদের দুনিয়ায় তেমন দস্তুর ছিল না অ্যাদ্দিন। ভীষণ ভাবে মনোগ্যামি সামুদ্রিক এই পাখিটি। দেখেশুনে সময় নিয়ে নিজের জীবনসঙ্গীটিকে বেছে নেয় এরা। তার পর একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দেয় তার সাথেই। তেমনটাই এতদিন হয়ে এসেছে।
তবে ইদানীং নাকি সেই সম্পর্কেই ধরছে ফাটল। ডিভোর্সের পথ বেছে নিচ্ছে আলবাট্রসরা। আর সেটাই আপাতত পরিবেশবিদদের উদ্বেগের কারণ। অ্যালবাট্রসদের সম্পর্কে এই ফাটলের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নকেই দুষছেন তাঁরা। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। সেই গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ফ্রান্সিসকো ভেঞ্চুরা জানাচ্ছেন, জলের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক শতাংশ থেকে লাফিয়ে আট শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে আলবাট্রসের বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা। গত বিশ বছর ধরে অন্তত ১৫ হাজার আলবাট্রাস জুটি রয়েছে ফকল্যান্ড দ্বীপে।
আরও শুনুন: মৃত্যু হবে আফ্রিকার বড় হিমবাহগুলির, পৃথিবীর বুকে কি নামবে বিপর্যয়?
শুভ্র রং, বিশাল ডানাবিশিষ্ট এই পাখিটির বিশেষ ক্ষমতাই হল, নিজেকে দিব্যি হাওয়ার অনুসারি পথে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে পাখিটি। একবারও ডানা ঝাপটাবার প্রয়োজন হয় না তাদের।
এই পাখিটিকে নিয়েই একটি কবিতা লিখে ফেলেন ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার। যার অনুবাদে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন-
মাঝে মাঝে, সকৌতুকে, নাবিকেরা তাকে ধরে ফেলে ।
বিশাল আলবাট্রস, সমুদ্রের বিহঙ্গপুঙ্গব,
তিক্ত ফেনা পেরিয়ে যে চলে আসে মৃদুমন্দ তালে।
বারবার সঙ্গীবদলের বিষয়টি একেবারেই ধাতে নেই বিশালাকার এই সামুদ্রিক পাখিটির। তবে পরবর্তী প্রজন্মকে জন্ম দিতে অক্ষম হলে অনেক সময় বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় ওরা। কিন্তু ইদানীং দেখা গিয়েছে, ঘর বাধা এবং সন্তান উৎপাদন, এই দুই ক্ষেত্রে সফল হওয়ার পরেও অন্য সঙ্গী বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। আর ভেঞ্চুরার মতে, এর পিছনে রয়েছে লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ। কিংবা স্ট্রেস হরমোনের বেড়ে যাওয়া। আর এ সবের পিছনেই রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণের প্রভাব।
আরও শুনুন: পেট বড় বালাই, পৃথিবীর ক্ষতি জেনেও বন পোড়ানোই পেশা বহু মানুষের
লং ডিসটেন্স সম্পর্ক কার জন্য না কষ্টকর। পাখিদের জন্যও বিষয়টি একইরকম। উষ্ণায়নের ফলে ক্রমশ বেড়েই চলেছে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা। ফলে খাবার খুঁজতে যেতে হচ্ছে অনেক দূরে। ফলে সময়মতো সঙ্গীর কাছে ফিরে আসতে পারছে না তারা। যার জন্য মিলনপ্রত্যাশী অন্য পাখিটি বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছে অন্য সঙ্গীকে। পরিবেশ ক্রমশ গরম হচ্ছে। তার উপর রয়েছে খাবারের ঘাটতি। ফলে বাড়ছে স্ট্রেস হরমোন। যার জন্য তাদের শারীরিক মিলনের ব্যাপারটি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে তাদের সম্পর্কেও।
বাকি অংশ শুনে নিন।