লম্বা সফরে যাবেন। তাই প্লেনের বেশ দামি সিট বুক করেছিলেন এক দম্পতি। কিন্তু এত খরচ করেও তাঁদের যাত্রা মোটেও সুখের হয়নি। যার কারণ এক সহযাত্রী। যিনি গোটা সফর জুড়ে, যেমন নাক ডেকেছেন তেমনই বাতকর্ম সেরেছেন। সেই আওয়াজ আর গন্ধের চোটে অতিষ্ট হয়ে সময় কাটিয়েছেন ওই দম্পতি। কোথায় ঘটেছে এমন কান্ড? আসুন শুনে নিই।
যে কোনও সফরেই সহযাত্রী ঠিক না হলে ভারী মুশকিল। তা সে সাধারণ ট্রেন, বাস হোক কিংবা বিলাসবহুল প্লেন। সহযাত্রী যদি বিরক্তির কারণ হন, তাহলে গোটা সফরটাই মাটি হতে বাধ্য। আর এখানে স্রেফ বিরক্তির কারণ নয়, সহযাত্রীর অত্যাচারে নিজেদের আসন বদলাতেও বাধ্য হয়েছেন এক দম্পতি।
আরও শুনুন: লাগে না বেতন, প্লাস্টিক জমা দিয়েই স্কুলে পড়াশোনা পড়ুয়াদের
ঘটনাটি ঘটেছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এক বিমানে। প্যারিস থেকে সিঙ্গাপুরগামী এক বিমানে সেদিন যাত্রা করছিলেন এক দম্পতি। তাঁরা অবশ্য নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা। দীর্ঘ ১৩ ঘন্টার ওই সফরের জন্য তাঁরা বুক করেছিলেন প্লেনের প্রিমিয়াম ইকোনোমি সিট। সাধারণের তুলনায় এই সিটের ভাড়া অনেকটাই বেশি। কিন্তু আরামে যাত্রা করবেন, এই আশা নিয়ে তাঁরা বুক করেছিলেন ওই দামি সিটই। কিন্তু আরাম তো চাইলেই পাওয়া যায় না, কপালে থাকতে হয়। এক্ষেত্রেও ঘটেছিল ঠিক তেমনটাই। সময়মতো বিমানবন্দর থেকে প্লেন টেক অফ করে। নির্দিষ্ট সিটে আয়েশ করেই বসেছিলেন ওই দম্পতি। সমস্যা শুরু হয় কিছুক্ষণ পর থেকে। হঠাৎ অদ্ভুত এক শব্দ শুনতে পান দুজনেই। একবার নয় দীর্ঘক্ষণ সেই আওয়াজ চলতে থাকে। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কারও মোবাইলে শব্দ হচ্ছে। কিন্তু তেমনটা যে নয়, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারেন দুজনে। শুধু তাই নয়, আওয়াজের সঙ্গে অদ্ভুত এক গন্ধও পেতে শুরু করেন তাঁরা। যা রীতিমতো অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। তখনও অবশ্য তাঁরা বুঝতে পারেননি ঠিক কোথা থেকে ওই গন্ধ বা আওয়াজ আসছে।
আরও শুনুন: অলৌকিক! ২০০০ ফুট উপর থেকে পড়েও অক্ষত, প্রাণে বাঁচলেন পর্বতারোহী
এদিকে এইভাবে বসে থাকাও আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই গন্ধ আর আওয়াজের উৎস খুঁজতে শুরু করেন ওই দম্পতি। একটু খোঁজার পরই সামনে আসে আসল সত্যি। দেখা যায়, দুইয়েরই কারণ তাঁদের এক সহযাত্রী। এতক্ষণ ধরে তাঁর নাক ডাকা এবং বাতকম্মের জেরেই অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন তাঁরা। এদিকে সে ব্যাপারে সহযাত্রীর কার্যত কোনও হুঁশ নেই। থাকবেই বা কী করে! তিনি তো কোনও মানুষই নন। আসলে এই কান্ড ঘটিয়েছে এক কুকুর। এতক্ষণ ধরে ওই দম্পতির সাধের প্রিমিয়াম সিটের নীচে সে দিব্যি নাক ডেকে ঘুম দিচ্ছিল। সেইসঙ্গে মনের সুখে বায়ু ত্যাগ। যদিও ওই কুকুরটা যে ভুল করে সেখানে রয়ে গিয়েছে তা নয়। বিমানে এমনটা হওয়া সম্ভব নয় বললেই চলে। আসলে, কুকুরটির মালিক ওই দম্পতির সামনের সিটেই বসেছিলেন। তবুও প্রিমিয়াম সিটে ওইভাবে পোষ্যদের রাখার নিয়ম নেই। কিন্তু এই কুকুরটি নাকি অসুস্থ। তাই তাকে ওখানে রাখার অনুমতি দিয়েছিল বিমান সংস্থা। কিন্তু এর জেরে যে এমন সমস্যায় পড়বেন অন্যান্য যাত্রীরা তা বুঝতে পারেননি তাঁদের কেউই। এদিকে মাঝ আকাশে অসুস্থ কুকুরকে অন্যত্র সরানোর উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের সিটটাই বদলে ফেলেন ওই দম্পতি। সাধারণ সিটে বসেই বাকি পথ ফিরতে হয় তাঁদের। ফলত গন্তব্যে পৌঁছেই ওই প্রিমিয়াম সিটের ভাড়া ফেরত দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা। আর তখনই প্রকাশ্যে আসে এই ঘটনা। যদিও পরে এই নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের তরফে ওই দম্পতির কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। তাঁদের বিশেষ উপহার পাঠানোর ব্যবস্থাও করেছে সংস্থা। সেইসঙ্গে তাঁরা এমনটাই ঘোষণা করেছে, ভবিষ্যতে প্লেনে কোনও পোষ্য থাকলে তা অন্যান্য যাত্রীদের আগে থেকেই জানানো হবে। যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। তবে দামি টিকিট কেটেও ওই দম্পতির এমন ভোগান্তির ঘটনা রীতিমতো শোরগোল ফেলেছে বিভিন্ন মহলে।