হ্যাঁ, মাউস। তবে কম্পিউটারের নয়, ডিজনির। পুরো নাম মিকি মাউস। ছোট্ট সেই ইঁদুরের কার্যকলাপে মুগ্ধ সারা দুনিয়া। কিন্তু জানেন কি, মিকি মাউস আদৌ ডিজনির আঁকাই নয়? তাকে আঁকার কৃতিত্ব আসলে অন্য এক শিল্পীর! আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মিকি মাউস কে বানিয়েছেন, প্রশ্ন করলে সবাই একবাক্যে বলবেন একটাই নাম। ওয়াল্ট ডিজনি। মিকি মাউস সৃষ্টির জন্যই সিনেদুনিয়ার সেরা পুরস্কার, অস্কার পেয়েছিলেন তিনি। একটা প্রচলিত গল্প আছে, ডিজনির স্টুডিওতে আনাগোনা ছিল একটা ইঁদুরের। একদিন কী খেয়ালে ডিজনি তাকে খাতায় ধরে ফেললেন। কিন্তু তাঁর মনে হল, ছবিটা বড্ড বেশি ইঁদুর ইঁদুর লাগছে। আপনি ভাবছেন, এ আবার কী কথা? ইঁদুরকে ইঁদুর লাগবে না তো মানুষের মতো লাগবে? না মশাই! ইঁদুরকে যদি ইঁদুর-ই মনে হয়, তবে তো ফোটো তুললেই হয়, আর্টিস্টের কারিকুরি তাহলে রইল কোথায়! আর সেইজন্যেই নাকি পাঁচটার জায়গায় চারটে আঙুল দিয়ে, আর কানগুলো গোল গোল করে ইঁদুরটার দিব্যি মেকওভার করে ফেলেন ডিজনি।
আরও শুনুন: মাথা জুড়ে সার্জারির দাগ, চুল কামানো… একরত্তি মেয়েকে সঙ্গ দিতে মাথা কামালেন বাবাও
কিন্তু আদতে এই গল্পটা নিছক গল্পই। কারণ, মিকি মাউসকে ডিজনি আঁকেনইনি! যিনি এঁকেছিলেন এই জনপ্রিয় ইঁদুরকে, তাঁর নাম, আব আইওয়ার্ক্স।
ভাবছেন, কুম্ভীলকবৃত্তির আরেকটা গল্প? এক শিল্পীর কাজ আত্মসাৎ করে আরেক শিল্পীর বিশ্বজোড়া খ্যাতি আর অন্যজনের বঞ্চনার গল্প? আসুন, তবে খুলেই বলা যাক।
এ বরং এক বন্ধুত্বের গল্প। একজনের বঞ্চনার প্রতিবাদে অন্যজনের পাশে দাঁড়ানো। এবং এক আশ্চর্য উত্তরণের পথে দুজনের মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
গল্পটা শুরু হয়েছিল, যখন চাকরিসূত্রে ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে দেখা হয়ে গিয়েছিল ডিজনি এবং আইওয়ার্ক্সের। কথায় বলে রতনে রতন চেনে। দুই শিল্পীরও একে অন্যকে চিনতে ভুল হয়নি। দুজনে মিলেই প্রথম ভাবেন, অ্যানিমেশন ছবি বানালে কেমন হয়? যেই কথা সেই কাজ। দুজনে প্রথম যে অ্যানিমেশন চরিত্রটা বানান, সে একটা খরগোশ। নাম দেওয়া হল অসওয়াল্ড দ্য লাকি র্যাবিট। আর শুরুতেই বাজিমাত। হুহু করে জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করল এই খরগোশের। কিন্তু শিল্পীদের কথামতো অ্যানিমেশন ছবির পিছনে বাজেট বাড়ে না! রাগের চোটে চাকরিই ছেড়ে দিলেন ডিজনি, আর তাঁর দেখাদেখি, আইওয়ার্ক্সও।
আরও শুনুন: সুখের খোঁজে গোটা একটা মিউজিয়াম! বিশ্বের কোথায় এমন সংগ্রহশালা আছে জানেন?
এদিকে কাজকর্ম না করলে খাবেন কী! অসওয়াল্ড-এর কপিরাইট ইউনিভার্সালের। তাহলে নতুন চরিত্র ভাবতে হয়! কুকুর, বিড়াল, গোরু, ঘোড়া, যা নিয়েই ভাবেন, কিছুতেই ঠিক মনঃপূত হয় না। আসলে অসওয়াল্ড-এর ভূত ঘাড় থেকে নামছিল না যে! শেষকালে একদিন এককালের পোষা ইঁদুরগুলোর কথা মনে পড়ল ডিজনির। ভাবলেন খানিকটা অসওয়াল্ডের ধাঁচে ইঁদুর আঁকা যায় কি না দেখা যাক। আর সেই ভাবনা থেকেই মিকির খসড়া বানিয়ে ফেলেন বন্ধু আইওয়ার্ক্স। খাটনি কমানোর জন্যই বেচারার হাতে পাঁচটার বদলে চারটে আঙুল আঁকেন। তবে মিকি-ভক্তদের মতে, মিকির শরীরটা আব আইওয়ার্ক্সের দেওয়া, আর তাকে প্রাণ দিয়েছিলেন ডিজনি। ১৯২৯ থেকে ১৯৪৭, আঠেরো বছর ধরে মিকির গলায় কথা বলে চলেন ডিজনি। মিকির গল্পে মজে যায় সারা দুনিয়া। কিন্তু কণ্ঠের জাদুতেই মিকির সঙ্গে সমার্থক হয়ে যান ওয়াল্ট ডিজনি। আর খানিক আড়ালেই থেকে যান শিল্পী আব আইওয়ার্ক্স।