মহাকবি বলেছেন, নামে কী আসে যায়! কমলালেবুর যে কিছু আসে যায় না সে কথা সত্যি। তবে ইতিহাসের এসে যায় বইকি। আর নামকরণের মধ্যে থেকেই তো উঠে আসে ইতিহাসের অজানা গল্প। কমলালেবুর নাম ঘেঁটে আসুন দেখা যাক, তেমনই কোন অজানা গল্পের হদিশ মেলে!
শীতের দুপুর মানেই কমলালেবুর স্বাদ আর গন্ধ। শীতবেলার পিকনিকে মিলেমিশে কমলা ছোঁয়া। কিন্তু কমলার স্বাদ মুখে মেখে নিতে নিতে কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এই লেবুটির নাম কমলা হল কেন? গায়ের রং কমলা বলেই কি তার নাম কমলা? নাকি উলটোটা? মানে লেবুর নামেই আসলে রঙের নামকরণ?
মহাকবি অবশ্য বলেছেন, নামে কী আসে যায়! কমলালেবুর যে কিছু আসে যায় না সে কথা সত্যি। তবে ইতিহাসের এসে যায় বইকি। আর নামকরণের মধ্যে থেকেই তো উঠে আসে ইতিহাসের অজানা গল্প। কমলালেবুর নাম ঘেঁটে আসুন দেখা যাক, তেমনই কোন অজানা গল্পের হদিশ মেলে!
বাংলায় যা কমলালেবু, ইংরেজিতে তা অরেঞ্জ। দুই ভাষাতেই রঙের নাম আর ফলের নাম মিলেমিশে আছে। অরেঞ্জ একটি ইংরেজি শব্দ, তাহলে, ইংরেজিতে অরেঞ্জ রঙের বলেই কি এই লেবুর নাম অরেঞ্জ? কিন্তু ইতিহাস যে বলছে, ‘অরেঞ্জ’ নামের ফলটি মোটেই ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে আগে পাওয়া যায়নি। এমনকি, কমলালেবু ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার আগে সে দেশে ‘অরেঞ্জ’ বলে কোনও রং-ই নাকি ছিল না। যা ছিল, তা হল হলুদ-লাল বা শুধু লাল। সুতরাং সেখান থেকে অরেঞ্জ আসার পথ নেই।
মজার কথা হল, এই শব্দ এসেছে কার্যত সংস্কৃত ভাষা থেকে। সংস্কৃত ভাষায় কমলালেবুকে বলা হত নারাং। প্রাচীন যুগে ভারতীয় বণিকেরা যখন দেশে দেশে বহির্বাণিজ্য করছেন, সেই সময়ে তাঁদের পণ্যের মধ্যে ছিল এই ফলও। তাঁদের হাত ধরেই মধ্য এশিয়ার নানা জায়গায় পৌঁছেছিল নারাং। দেশ বদলায়, বদলায় ভাষা, আর দুয়ে মিলে রূপ বদলায় শব্দ। সংস্কৃত নারাং বদলে আরবি ভাষায় হয়ে যায় নারাঞ্জ।
এদিকে ভূগোলের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষ যত এগোয়, তত এগোয় খাবার, শস্য, পণ্য। মধ্য এশিয়ার মুসলিম শাসকরা পৌঁছে যান ইতালি, স্পেনে। আরবের থেকে আসা মানুষের হাত ধরে মধ্যযুগে এইসব দেশে ঢুকে পড়ে কমলালেবুও। শুরু হয় চাষ। আর নারাঞ্জ থেকেই তৈরি হয় ইংরেজির নতুন শব্দ, অরেঞ্জ।