পাখিকে কাঠগড়ায় তো তোলা হল। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনে তার হাজিরা দেওয়ার নাম নেই। সে মনের খুশিতে এদিকে ফুড়ুৎ তো ওদিকে ফুড়ুৎ! এদিকে অভিযোগের নিষ্পত্তি না হলেও নয়। পাখিদের গয়নাপ্রীতির তো একটা যুৎসুই বয়ান থাকা দরকার। তা জানা যাবে কী করে!
টুনটুনি আর রাজার গল্পটা সেই কবে আমাদের শুনিয়ে দিয়েছেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। সিন্দুকের টাকা যেই না শুকোতে দেওয়া হয়েছে, অমনি একটি টাকা তুলে নিয়ে টুনটুনি দে চম্পট! তারপর রাজার যে নাক কাটা যাওয়ার গল্পগাছা, তা বাঙালি মাত্রই জানে। তা সত্যিই কি পাখিরা এমন ধনসম্পদ চুরি করে নিয়ে গিয়ে তুলে রাখে বাসায়! সম্প্রতি এক ভিডিও ঘিরে আবার সেই জল্পনা।
নেটদুনিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছিল এই ভিডিওটি। দুই পাখি মিলে ঘর বেঁধেছে। আর তাদের বাসায় আছে গুচ্ছের সোনার গয়না। তা পাখির ঘরে এত সোনাদানা এল কোথা থেকে? জানা গেল, বেঙ্গালুরুর যে রাস্তার উপর এই পাখির বাসা, তার পাশেই আছে সোনার দোকান। মালিকের নাকি আফশোস যে, ফাঁকফোকর দেখে পাখি-দম্পতি মুখে করে সোনার গয়না নিয়ে পালিয়েছে। তা-ও একটু আধটু নয়, নয় নয় করে নাকি এক কেজি সোনা পাচার করে ফেলেছে দুই পাখি। আর তা সাজিয়ে রেখেছে নিজেদের বাসায়। তা সোনার সংসার সোনা দিয়ে মুড়ে রাখতে কার না ভালো লাগে! এদিকে, এত সোনা হারিয়ে মালিকের তো মাথায় হাত! খোওয়া যাওয়া সম্পদ উদ্ধার করা যায় কী করে! অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যখন উদ্ধার করতে যাওয়া হল, দেখা গেল পাখির ঘরে তৃতীয়জন। অর্থাৎ একটি ফুটফুটে ছানা আছে। অতএব সাপ না মরে লাঠিও না ভাঙে এরকম একটা পদ্ধতি বের করতে হল। পাখির ছানাকে সহিসালামত রেখেই নাকি শেষমেশ গয়না উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে, ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায় কিনা! অতএব, দোকানের চারপাশে নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন দোকানের মালিক। যাতে গয়না হাপিশের তদন্ত সহজেই করা যায়।
তো এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই, গ্রামে গ্রামে রটে গেল বার্তা; যে, পাখিরা নাকি সোনার গয়না নিয়ে যায়, তবে লকারে না রেখে বাসাতেই রাখে! এখন, পাখিকে কাঠগড়ায় তো তোলা হল। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনে তার হাজিরা দেওয়ার নাম নেই। সে মনের খুশিতে এদিকে ফুড়ুৎ তো ওদিকে ফুড়ুৎ! এদিকে অভিযোগের নিষ্পত্তি না হলেও নয়। পাখিদের গয়নাপ্রীতির তো একটা যুৎসুই বয়ান থাকা দরকার। তা জানা যাবে কী করে! অতএব বেশ কয়েকটি সংস্থা, ভিডিওটি নিয়ে চুলচেরা আলোচনা করতে বসে। কাটাছেঁড়া চলে বিস্তর। শেষে জানা যায়, এ কারসাজি পাখির নয়, মানুষেরই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষই পাখির বাসায় কেজিখানেক সোনা রেখে দিয়েছে। পাখিরা এটা ওটা মুখে করে নিয়ে যায় বটে! গয়না যে নিয়ে যেতে পারে না, এমন গ্যারান্টি কেউ দিচ্ছে না। কিন্তু সোনার দোকান থেকে কর্মচারীদের চোখে ধুলো দিয়ে পাখি গয়না চুরি করে বাসায় নিয়ে গিয়ে রেখেছে, এ অভিযোগ ডাহা মিথ্যে!
যাই হোক, পাখি অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি শব্দও খরচ করেনি। তবে, পাখির ঘাড়ে মানুষই যে চুরির মিথ্যে দায় চাপিয়েছে, এ কথা জেনে জিভ না কেটে উপায় নেই! মাঝখান থেকে, পাখির চুরিকাহিনি যাঁরা দেদার শেয়ার করেছিলেন, এ যাত্রা যেন তাঁদেরই নাক কাটা গেল!