হাঁটতে বেরিয়েছেন। হঠাৎ পায়ে একটা পাথর ঠেকল। হাতে নিয়ে দেখলেন, সাধারণ কোনও পাথর নয়, পায়ে ঠেকেছে আস্ত একটা হিরে। স্বপ্নে নয়, বাস্তবেই এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারেন আপনি। তার জন্য কোথায় যেতে হবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঠিক যেন চাঁদের পাহাড়ের সেই অলৌকিক গুহা। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে বহুমূল্য হিরে। তবে গল্পের নায়ক সেই পাথরের মর্ম বুঝতে না পারলেও, বাস্তবে প্রায় সকলেই হিরে চেনেন। তাই রাস্তায় সেই মূল্যবান পাথর পড়ে আছে দেখলে, অবহেলা না করাই স্বাভাবিক।
আরও শুনুন: হাসিমুখে ৪০ হাজার কোটির সম্পত্তি ত্যাগ, মাত্র ১৮ বছরেই সন্ন্যাসগ্রহণ করেছিলেন যিনি
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বাস্তবেই রয়েছে এমন এক রূপকথার রাজ্য। অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় এমনটা দেখা যায়। তবে স্রেফ বর্ষাকালেই। বৃষ্টি পড়লেই এখানকার রুক্ষ জমির নরম মাটি সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে হিরে। মূলত অনন্তপুর এবং কুর্নুল জেলার মধ্যেকার এলাকায় সবথেকে বেশি হিরের খোঁজ পাওয়া যায়। তাই বর্ষা পড়লেই এখানে হিরের খোঁজে ভিড় জমাতে শুরু করেন আশেপাশের গ্রামবাসীরা। স্রেফ তাঁরাই নন, এই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে হাজির হন। এক্ষেত্রে রায়লসীমা নামে একটি জায়গা বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। আসলে এই অঞ্চল থেকেই প্রতি বছর কেউ না কেউ হিরে খুঁজে পান বলেই জানা যায়। কখনও এক-দুজন নয়, বেশ কয়েকজন হিরের সন্ধান পান। যা বিক্রি করে রীতিমতো মোটা টাকার মালিক হন তাঁরা। তবে এই হিরে খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি নতুন নয়। বহুকাল আগে থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। কোনও এক কালে, মাটিতে কোদাল চালাতে গিয়ে হিরে খুঁজে পান অন্ধ্রের এক চাষি। সেই হিরে বিক্রি করে রাতারাতি ভাগ্যবদল হয় তাঁর। জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিগিত কয়েকবছরে এই কুড়িয়ে পাওয়া হিরে বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে কৃষকদের সংখ্যাই সুবথেকে বেশি। তাই বর্ষা নামলেই সকলে হিরে খুঁজতে শুরু দেন এইসব এলাকায়।
আরও শুনুন: গৃহবধূরা ফেলনা নন! সিভি-তে ১৩ বছর ঘর সামলানোর কথা লিখে প্রশংসা কুড়োলেন মহিলা
তবে রায়লসীমা এলাকায় দামি রত্নের খোঁজ পাওয়া অনেকেই স্বাভাবিক বলে মনে করেন। এমনকি ইতিহাসেও এই প্রসঙ্গের উল্লেখ মেলে। এককালে হিরে-জহরতের জন্য গোটা দেশে নাম ছিল এই রায়লসীমা অঞ্চলের। এমনটাও কথিত রয়েছে, সে আমলে শাক-সব্জি বিক্রির মতো হিরে-সহ নানা দামি রত্নের বিক্রিবাটা চলত। তবে সে যুগ আর নেই। বর্তমানে হিরে একটি বহুমূল্য পাথর। খোলা বাজারে তা বিক্রি হওয়া অসম্ভব। কিন্তু অন্ধ্রের এই কুড়িয়ে পাওয়া হিরে একপ্রকার অনৈতিক ভাবেই বিক্রি হয়। এইসময় এলাকায় ভিড় করেন অনেক হিরে ব্যবসায়ীও। তাঁরাই মূলত হিরেগুলি কিনে নেন। তবে সেক্ষেত্রে গরীব চাষীদের তাঁরা কতটা সঠিক দাম দেন, তা বলাই বাহুল্য। ৫০ লক্ষ থেকে আরম্ভ করে ২ কোটি, এর মধ্যেই হিরের দাম ঘোরাফেরা করে। হিরের মান বিচার হয় ক্যারাটের উপর ভিত্তি করে। তাই এ ব্যাপারে জহুরি যা বলছেন, তাই মেনে নেন সকলে। সাধারণ কোনও পর্যটকও যদি হিরে খুঁজে পান, তাহলে ওই ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে সেখানেই তা বিক্রি করে আসেন তাঁরা। আর চাষীরা খুঁজে তো কথাই নেই। কয়েক ঘন্টার মধ্যে তা কিনে ফেলেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের বিশেষ কড়াকড়িও নেই। অন্যদিকে ঠিক কী কারণে এইসময় মাটিতে হিরে পাওয়া যায়, সে ব্যাপারেও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু তাতে কী! হিরে পাওয়া যায় এটুকুই যথেষ্ট। সেই টানেই দূরদূরান্ত থেকে অন্ধ্রের ওই বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে যান পর্যটকেরা।