রাবণের চিতা নাকি কখনও নেভে না। তেমনই এক অনির্বাণ আগুন জ্বলে চলেছে এই শহরের নিচে। প্রায় ৬০ বছর ধরে জ্বলছে সেই আগুন। তার জেরেই শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বাসিন্দারা। পরিত্যক্ত শহর তবু জ্বলছে এখনও। কোথায় আছে এমন শহর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আগেকার দিনে ভয়ংকর মহামারীর প্রকোপে অনেক সময় উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম। ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতেন বেঁচে থাকা মানুষেরা। কিন্তু তেমন কোনও ভয়ানক রোগের কবলে পড়েনি এই বিশেষ শহরটি। আগ্নেয়গিরির আকস্মিক বিস্ফোরণ, কিংবা নদীর ভাঙনের মতো কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথাও শোনা যায়নি এখানে। তবুও এই শহর পরিণত হয়েছে এক পরিত্যক্ত ভূমিতে। শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন অধিকাংশ বাসিন্দাই। কারণ এই শহরটা যে আদতে জ্বলন্ত উনুনের উপরে বসানো হাঁড়ির মতো। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, যে কোনও সময় এই শহরে ঢুকলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কারণ, রাস্তার নিচেই যে জ্বলছে আগুন।
আরও শুনুন: রোষ শুধুই সিনেমাকে ঘিরে! ‘বয়কট’ ট্রেন্ড ধর্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন? প্রশ্ন উরফির
না, গল্পকথা নয়। মার্কিন মুলুকে দেখা মেলে এমনই এক শহরের। সেন্ট্রালিয়া নামে এই শহরটির রাস্তায় দেখা মেলে না কোনও মানুষের। যে গুটিকয়েক বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেও আর কোনও মানুষের বাস নেই এখন। জানা যায়, কয়েক দশক আগে শহরের এক কিশোর খেলতে গিয়ে একটি গর্তে পড়ে গিয়েছিল। তাকে উদ্ধার করতে গিয়েই শহরবাসীরা আবিষ্কার করেন, মাটির নিচে জ্বলছে আগুন। তারপর থেকেই ভয়ে আতঙ্কে শহর ছাড়তে শুরু করেন অনেকেই। ১৯৮০ সালেও এই শহরে থাকতেন প্রায় ২৭০০ জন মানুষ। সেখানে ২০২০ সালে শহরে বসবাসকারীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৪ জন। আর বর্তমানে একজনও থাকতে পারেন না এই শহরে। কারণ ক্রমাগত জ্বলতে থাকা আগুনের ফলে রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। আর সেখান দিয়েই এই অনির্বাণ আগুনের দৌলতে এখন শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত গ্যাস। কার্বন মনোক্সাইডের মতো গ্যাসগুলি ছড়িয়ে পড়ায় এই শহর আর মানুষ বাসের উপযোগী নেই।
আরও শুনুন: বিরল সম্মান, ‘সংগ্রহ’ হিসেবে মার্কিন মিউজিয়ামে ঠাঁই পেলেন ভারতীয় পাইলট জোয়া
কিন্তু কেন এমনভাবে আগুন জ্বলছে এই শহরের নিচে? জানা গিয়েছে, বহুকাল আগে এই শহরের নিচে নাকি অনেকগুলি জ্বালানি দ্রব্যের খনি ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই খনিগুলির কয়েকটি অবশিষ্ট রয়েছে এখনও। আর সেখান থেকেই এই আগুনের উদ্ভব। ৬০ বছরেও যে আগুনের নেভার লক্ষণ নেই। আরও কয়েক শতাব্দী ধরেই এই আগুন জ্বলতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।