‘চরৈবতি’- এই মন্ত্রে বিশ্বাস রেখেই বিশ্বের দরবারে কুর্নিশ আদায় করলেন এক ব্যক্তি। প্রায় পাঁচ দিন টানা পথ চলা, আর তাতেই তাঁর নাম উঠল গিনেস বুকে। কিন্তু কৃতিত্ব শুধু হাঁটাই নয়, হেঁটে একটি মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন তিনি। আসুন, শুনে নিই তাঁর সাফল্যের গল্প।
পেশা দাঁতের ডাক্তারি। কিন্তু নেশার তালিকাটা তাঁর বিস্তর লম্বা। পাহাড় চড়া থেকে টানা সাইকেল চালানো- সবই আছে সেই তালিকায়। মাঝেমধ্যেই কাজ ফেলে বেরিয়ে পড়েন নানা দুঃসাহসিক অভিযানে। ইতিমধ্যেই চড়েছেন এভারেস্টে, ভারতের প্রথম আলট্রা সাইক্লিস্ট হিসেবে আমেরিকায় জিতে নিয়েছেন সেরার খেতাব। সম্মান পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত থেকেও। তাতেও অ্যাডভেঞ্চারের পিপাসা মেটেনি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মহেন্দ্র মহাজনের। ৪৬ বছর বয়সেও তিনি যেন তরতাজা যুবক। পথ চলার নেশায় আবারও তাই বেরিয়ে পড়েছিলেন। পায়ে হেঁটেই লাদাখের লে থেকে হিমাচল প্রদেশের মানালির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: এক প্লেটের দাম প্রায় ১৬ হাজার টাকা, গিনেস বুকে সবথেকে দামি ভাজাভুজি এই ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’
প্রায় পাঁচ দিন ধরে লাগাতার হাঁটা। তবেই পৌঁছতে পারলেন লক্ষ্যে। লে থেকে মানালি পৌঁছতে তাঁর মোট সময় লেগেছে ৪ দিন ২১ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। সব মিলিয়ে অতিক্রম করেছেন মোট ৪৩০ কিলোমিটার রাস্তা। আর এই কৃতিত্বই জায়গা করে নিয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। পায়ে হেঁটে সবথেকে দ্রুত এই দূরত্ব অতিক্রম করেছেন মহেন্দ্র। যা নজিরবিহীন বলেই জানিয়েছে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড কমিটি। এর আগে ২০২১ সালে সুফিয়া খান মানালি থেকে লে গিয়েছিলেন পদব্রজে। তাঁর সময় লেগেছিল ৬ দিন ১২ ঘণ্টা ৬ মিনিট। তখন অবশ্য সেখানে ‘অটল টানেল’ ছিল না। রোটাং পাস দিয়ে ওই যাত্রা শেষ করেন সুফিয়া। তবে তাঁর সময়ের রেকর্ডকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মহেন্দ্র।
আরও শুনুন: লিট্টি চোখা রান্না, নলকূপের জলে স্নান… ছুটি কাটাতে গ্রামে গিয়ে ‘মাটির মানুষ’ পঙ্কজ ত্রিপাঠী
বরাবরই অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসেন তিনি। ২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট অভিযান শেষ করেন মহেন্দ্র। আলট্রা সাইক্লিস্ট হিসেবেও তাঁর সাফল্য নজর কেড়েছিল। এবার ফের একবার নজির গড়লেন তিনি। মহেন্দ্র জানিয়েছেন, বিষয়টি অবশ্য মোটেও সহজ ছিল না। এক দিনে প্রায় ৯৬ কিলোমিটার হেঁটেছেন তিনি। কখনও দৌড়েছেন তো কখনও জগিং করেছেন। মহেন্দ্রর এই গোটা সফরে তাঁর পাশে ছিল বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তাঁর এই সফরে যাতে কোনও বিঘ্ন না আসে, সেই দিকটির খেয়াল রাখতেন তাঁরা। পাশাপাশি খাবারদাবারের ব্যাপারটি নজরে রাখার জন্যও ছিলেন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল লে-র তাপমাত্রা। কখনও আবার বৃষ্টির জেরেও যথেষ্ট নাকাল হতে হয়েছে তাঁকে। তবে সমস্ত বাধা কাটিয়ে ইতিবাচক ভাবেই সফর শেষ করেছেন মহেন্দ্র। তাঁকে উৎসাহ দিতে এগিয়ে এসেছিলেন বহু স্থানীয় মানুষ। যা মুগ্ধ করেছে মহেন্দ্রকে। সেই সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভেচ্ছা আর মনোবলের জোরেই আজ গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছেন মহারাষ্ট্রের এই দন্তচিকিৎসক। তাঁর সফরের কথা ছড়িয়ে পড়তেই শুভেচ্ছাবার্তায় ভরেছে সোশ্যাল মিডিয়া।