যাঁর স্মরণসভায় যোগ দিতে এসেছিলেন আত্মীয় পরিজনেরা, দেখা গেল, তিনিই কথা বলছেন সকলের সঙ্গে। শোনাচ্ছেন নিজের জীবনের গল্প, এমনকি উপস্থিত কেউ কোনও প্রশ্ন করলে তার উত্তরও মিলছে সঙ্গে সঙ্গেই। মৃত্যুর পরেও কীভাবে সম্ভব হল এই কথোপকথন? তবে কি এ কোনও অলৌকিক কাণ্ড? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মরে যাওয়ার পরও কথা বলছেন খোদ মৃত মহিলা। তাঁর শোকসভায় এসে সে ঘটনা দেখে তো অতিথিদের চক্ষু চড়কগাছ। ভূতের গল্পে বা হরর সিনেমায় এমনটাই আকছারই দেখা যায়, তা বলে বাস্তবে কে শুনেছে এমন? না, প্ল্যানচেট জাতীয় কোনও মাধ্যমেরও সাহায্য নেওয়া হয়নি এখানে। বলা ভাল, ব্যাখ্যা করা যায় না এমন কোনও কিছুই ছিল না এই ঘটনার পিছনে। আর সে কথাই সকলের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মৃতার বাড়ির লোকজন। তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোনোরকম আধিভৌতিক বা অলৌকিক উপায়ে নয়, বরং বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েই প্রিয় মানুষটির স্মৃতিকে ধরে রাখা হয়েছে। কীভাবে? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের মুক্তিতে চলল মিষ্টি বিতরণ, কী বলছেন বিলকিসের স্বামী?
চলতি বছরের জুন মাসে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান মেরিনা স্মিথ এমবিই নামের ওই মহিলা। নটিংহামের ব্যাবওয়ার্থে অন্ত্যেষ্টিও সম্পন্ন হয় তাঁর। এরপর ২৯ জুলাই তারিখে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানেই ঘটে এহেন আশ্চর্য কাণ্ড। উপস্থিত অতিথিদের সামনে নিজের জীবন সম্পর্কে একটি ছোটখাটো বক্তৃতাই দিয়ে ফেলেন মৃত মহিলা। এমনকি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে তাঁর কী মতামত, সে নিয়ে বক্তব্য রাখতেও ছাড়েননি। এরপরে সেখানে উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের প্রশ্নের উত্তরও দেন ওই মহিলা।
আরও শুনুন: আকাশ থেকে ঝরেছিল ‘রক্তবৃষ্টি’, কারণ নিয়ে ধন্দে ছিলেন বিজ্ঞানীরাও
আসলে সবই ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)’-এর কারসাজি। এর মাধ্যমে ‘হলোগ্রাফিক’ ভিডিও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এইভাবে অবাস্তবকে বাস্তব করে দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অতিথিরা স্ক্রিনে যে মহিলাকে কথা বলতে দেখেছিলেন, তা আসলে মেরিনা নয়, মেরিনার ‘হলোগ্রাফিক’ অবয়ব। জানা গিয়েছে, এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক মেরিনার ছেলে স্টিফেন স্মিথ। তিনি লস অ্যাঞ্জেলসের একটি বিখ্যাত এআই সংস্থা স্টোরিফাইলের প্রতিষ্ঠাতাও। তিনিই জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে জানুয়ারি মাসে তাঁর মায়ের দুদিন ধরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। সেখানে রেকর্ড করা প্রশ্নোত্তর এবং তাঁর মায়ের ছবি জুড়ে জুড়ে ওই হলোগ্রাফিক অবতার বানানো সম্ভব হয়েছে। যা চমকে দিয়েছে শোকসভায় উপস্থিত অতিথিদের। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি মেনে নিতে সকলেরই অসুবিধা হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ তাঁদের প্রিয়জনদের কার্যত বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।