ব্যর্থতাই যে সাফল্যের চাবিকাঠি, এটা যাঁরা মানতে নারাজ, তাঁদের অবাক করবে এই কন্যার গল্প। জীবনের চড়াই-উৎরাই পথে বাঁধা এসেছে বারবার। অভাব, বারবার হেরে যাওয়া। তবে সেসবের তোয়াক্কা না করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। সাধারণ সবজিবিক্রেতার মেয়ে হয়ে সিভিল আদালতের বিচারকের আসন পর্যন্ত পৌঁছনোর পথটা কেমন ছিল তাঁর? আসুন, শুনে নিই।
অভাবের সংসার। কোনওমতে সবজি বিক্রি করে সেই জোয়াল টানছেন বাবা। বাবাকে সাহায্য করতে দোকানে যান মা-ও। কোনও মতে যদি কয়েকটা টাকা বেশি আয় হয়। ইন্দোরের একটি বালির বাজারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ভাই। সেই সংসারের মেয়ে হয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নটাই হয়তো ছিল বিলাসিতা। তবু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা ২৯ বছরের অঙ্কিতা নাগার।
বরাবরই পড়াশোনায় বিস্তর আগ্রহ অঙ্কিতার। তাই শত অভাব সত্ত্বেও কোনও দিন নিজের লক্ষ থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। ছোট থেকেই আইন নিয়ে পড়াশোনার শখ। আইনে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর সিভিল বিচারক দ্বিতীয় ক্লাসের পরীক্ষায় বসেন অঙ্কিতা।
না, সব গল্প রূপকথার মতো হয়না। হয়নি তাঁর ক্ষেত্রেও। সেই পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি অঙ্কিতা। হতাশ হয়েছিলেন তবে হাল ছাড়েননি। ফের সমস্ত উদ্যম জড়ো করে পরীক্ষায় বসেন। আবার ব্যার্থতা। এক বার, দুবার নয়, তিন-তিন বার সেই পরীক্ষায় ব্যর্থ হন তিনি। অন্য কেউ হলে হয়তো হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন। একে অভাবের সংসার। তার পর অঙ্কিতার বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ফলে পারিপার্শ্বিক চাপ আসত সব সময়েই, তবে সে সবে পাত্তা দেননি তিনি। বাবা-মার সমর্থন ছিল পাশে। ফলে দুনিয়ার আর কোনও কিছুরই ভয় করেননি অঙ্কিতা।
আরও শুনুন: বোনকে কোলে নিয়েই স্কুলে, খুদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষার ভার নিলেন মন্ত্রী
ভোর পাঁচটা বাজতে না বাজতেই ঘর ছাড়েন বাবা। ইন্দোরের মুসাখেড়ি এলাকায় সবজি নিয়ে বসেন। ঘরের কাজকর্ম সেরে সকাল আটটা নাগাদ বাবাকে সাহায্য করতে দৌড়ন মা-ও। মাঝে মাঝে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করে দেন অঙ্কিতাও। তার মধ্যেই চলত জোর কদমে প্রস্তুতি। প্রতিদিন প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতেন অঙ্কিতা। আর সেই পরিশ্রমেরই ফল মিলেছে হাতেনাতে।
দিন কয়েক আগেই রেজাল্ট বেরিয়েছে। তবে এক আত্মীয় মারা যাওয়ার কারণে সেই ফল জানতে দেরি হয় তাঁর। বুধবার বাড়ি ফিরেই সবার আগে রেজাল্ট দেখতে ছুটেছিলেন। আর সেই ফলাফল হাতে আশার পর আনন্দ ধরে রাখতে পারেননি অঙ্কিতা। অবশেষে তিনি পেরেছেন। না, শুধু পাশই করেছেন তাই নয়। তফসিলি কোটায় মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: অবিশ্বাস্য! মাত্র ১৩ বছরেই স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে তাক লাগাল বালক
অর্থাভাব, অনটন, আশপাশের নানা ধরনের চাপ থাকা সত্ত্বেও কোনও দিন নিজের লক্ষ থেকে ভ্রষ্ট হননি অঙ্কিতা। তিন বারের ব্যার্থতার পরেও হারাননি মনোবল। জানতেন ঠিক পারবেন তিনি।
আপাতত অঙ্কিতার সাফল্যে যারপরনাই খুশি তাঁর পরিবার। টাকার অভাবে নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি অঙ্কিতার মা। তবে মেয়ের পড়াশোনায় এতটুকু সমঝোতা করতে রাজি ছিলেন না তিনি। সবজিওয়ালার মেয়ে থেকে সোজা সিভিল আদালতের বিচারক। হাজার রকম বাঁধার পাহাড় টপকে অঙ্কিতার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে নেটদুনিয়া।