অ্যান্ড্রয়েড ফোন হোক বা আইফোন- এরকম মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যার হাতে স্মার্টফোন নেই। আর স্মার্টফোন মানেই হাতের মুঠোয় দারুণ দারুণ সব অ্যাপ, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে আজকাল ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু যদি বলি এমন অনেক অ্যাপ আছে যা মুহূর্তেই ডেকে আনতে পারে বিপদ। আপনার সাধের ফোনেটিতে ডেকে আনতে পারে ম্যালওয়্যার অ্যাটাক। আসুন সেগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ফোন বা কমপিউটরে ম্যালওয়ার অ্যাটাক এখন আর অজানা জিনিস নয়। প্রায়শই এরকম অনেক খবরই আমাদের নজরে আসে। হ্যাকাররা রোজই প্রায় নিত্যনতুন কৌশলে, ম্যালওয়ারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা চুরি করে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে বাংলার ফুটবল জগতের মহীরুহ সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে হওয়া জালিয়াতির কথা বলা যায়। মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি গিয়েছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। সৌজন্যে সেই ম্যালওয়্যার। সবথেকে বেশি আশঙ্কার কথা হল, এই ম্যালওয়্যার কিন্তু আমাদের স্মার্টফোনে আসছে আমাদের বিশ্বস্ত সূত্র থেকেই অর্থাৎ গুগল প্লে-স্টোরে থাকা অ্যাপ থেকেই।
আরও শুনুন: কান্না না হাসি! অতিমারীর সময়ে সবথেকে জনপ্রিয় হল কোন ইমোজি?
সম্প্রতি ব্লিপিং কমপিউটরস-এর সঙ্গে ডক্টর ওয়েব-এর সুরক্ষা বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন ম্যালওয়ারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। SpinOK নামে এই নতুন ম্যালওয়ারটি গুগল প্লে-স্টোরের শতাধিক অ্যাপকে সংক্রমিত করে ফেলেছে। আর সবথেকে শঙ্কার বিষয়টি হল, ইতিমধ্যেই সেই সব অ্যাপগুলি প্রায় ৪০ কোটিবার ডাউনলোডও হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন এই সমস্ত অ্যাপ। ভাবতে পারেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ট্রোজান ম্যালওয়ারটিকে বিভিন্ন অ্যাড, ও মিনি গেমসের ছদ্মবেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে তা আরও বেশি করে মানুষকে আকৃষ্ট করে। একবার কেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করলে, এই ম্যালওয়্যার ওই ফোনের সব ডাটা চুরি করে কোনও একটি রিমোট সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর! প্রায় ৪০ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু সাইবার হানার আশংকা উড়িয়ে দাওয়া যাচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তেই তারা এই আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে গুগলকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন। এখন আপনারাও যাতে এই অ্যাপগুলো ভুলেও ডাউনলোড না করে ফেলেন সে বিষয়ে আপনাদেরই সতর্ক হতে হবে।
আসুন জেনেনি ডক্টর ওয়েবএর রিপোর্টে থাকা ১০১টি অ্যাপর মধ্যে বিশেষ কিছু অ্যাপের নাম যেগুলি সব থেকে বেশি ডাউনলোড করা হয়েছে। সেগুলি হল,
১. noizz , এটি একটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। প্রায় ১০ কোটি ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপটি।
২. Zapya একটি ফাইল ট্রান্সফারিং অ্যাপ। এটাও ১০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন।
এছাড়া রয়েছে VFly , MVBit , Biugo-র মতো কয়েকটি ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। রয়েছে ক্রেজি ড্রপ, Cashzine , Fizzo Novel , CashEM , tick-এর মতো অ্যাপও ।
আরও শুনুন: ‘নয়না ঠগ লেঙ্গে’… সেরা রোম্যান্টিক গানটাই ছিল না ‘ওমকারা’ ছবিতে, এল কীভাবে?
যদিও বিশেষজ্ঞদের তৎপরতায় গুগল প্লে-স্টোর থেকে ইতিমধ্যেই এই অ্যাপগুলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও জানানো হয়েছে, কেউ যদি এখনও এই অ্যাপগুলিকে প্লে-স্টোরে দেখতে পান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন প্লে-স্টোর অ্যাপটিকে আপডেট করে নেন। পাশাপাশি সিকিউরিটি আপডেট করিয়ে নেওয়াও জরুরি। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন এই ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা অত্যন্ত আবশ্যক। অতএব প্রযুক্তির সঙ্গে হাত হাত মিলিয়েই চলুন, তবে ভুল করেও সতর্ক থাকতে ভুলবেন না।