ভরা বিয়েবাড়ি। যেদিকে তাকাও লোকজন। তার মধ্যে সেনার উর্দিধারীদের সংখ্যাই বেশি। কনেকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া থেকে কন্যাদান, সবই করছেন সেনার জওয়ানরা। সম্প্রতি এমনই কিছু ছবি ঘিরে শোরগোল পড়েছে নেটদুনিয়ায়। ঠিক কেন বিয়েবাড়িতে উর্দি পরে হাজির হয়েছিলেন জওয়ানরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এই মন্ত্রে শপথ নিয়েই বাড়ির বাইরে পা রাখেন দেশের জওয়ানরা। কেউ দিনরাত এক করে সীমান্ত রক্ষায় ব্যস্ত থাকেন। কেউ আবার বুক চিতিয়ে এগিয়ে যান যুদ্ধের ময়দানে। ঘরে ফেরা হয় না সবার। দেশ মায়ের কোলেই ঢলে পড়ে বীর সৈনিকের দেহ। অপেক্ষায় থেকে যায় তাঁর কাছের মানুষরা।
আরও শুনুন: ওয়েনাড়ের পর রায়বরেলিতে প্রার্থী হতেই রাহুলকে খোঁচা বিজেপির, কিন্তু কী মত ভোটারদের?
এমনভাবেই পরিবারকে চিরকালের জন্য অপেক্ষায় রেখে চলে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর ১৬৮ ব্যাটেলিয়নের সদস্য কনস্টেবল রাকেশ কুমার মিনা। ২০১০ সালে নক্সালদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারান রাকেশ। এই ধরনের ঘটনায় জওয়ানের পরিবারকে যথেষ্ট সাহায্য করা হয় সরকারের তরফে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। রাকেশের পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের সাহয্য করে সরকার। তবু পরিবারের মাথা যদি চলে যান তাহলে আর কীই বা থাকে। আর্থিক সমস্যা না হয় সরকারি সাহায্যে মিটল। কিন্তু পরিবারের অভিভাবক হয়ে কে থাকবেন এরপর?
আরও শুনুন: ভারতের ভোটই মডেল! লোকসভা নির্বাচনের ‘পাঠ’ নিতে হাজির ২৩ দেশের নির্বাচন কমিটির সদস্য
মিনা পরিবারকে অবশ্য সে চিন্তা করতে হয়নি। কারণ রাকেশের মৃত্যুর পর তাঁর সতীর্থ জওয়ানরাই বাড়িয়ে দেন সাহয্যের হাত। এতদিন ধরে রাকেশের পরিবারের যাবতীয় সমস্যায় পাশে থেকে জওয়ানরা। সম্প্রতি সেই ছবিই ধরা পড়ল প্রয়াত রাকেশের মেয়ের বিয়েতে। আসলে ভাইরাল হওয়া বিয়ের ছবি রাকেশ কন্যা শরিকার বিয়ের। সেখানেই উর্দি পরে হাজির হয়েছিলেন প্রয়াত কনস্টেবলের সতীর্থরা। শুধু অনুষ্ঠানে হাজির থাকাই নয়, বিয়ের আচার আয়োজনেও অংশ নিতে দেখা যায় তাঁদের। ভাইরাল ছবিতে ধরা পড়েছে, শরিকাকে বিয়ের মণ্ডপে নিয়ে আসছেন উর্দিধারি জওয়ানরা। তাঁরাই কনের মাথার উপর কাপড় ধরে রেখেছেন। অবাঙালি বিয়েতে এই ধরনের আচার পালনের চল রয়েছে। সাধারণত কনের পরিবারের সদস্যরাই এমনটা করে থাকেন। তবে ক্ষেত্রে শরিকার জন্য সেই কাজ করেছেন তাঁর বাবার বন্ধুরাই। এখানেই শেষ নয়। কন্যাদানও করেছেন উর্দিধারী জওয়ানরাই। সবমিলিয়ে গোটা বিয়াবাড়িতে কনস্টেবল রাকেশ-এর অনুপস্থিতি সেইভাবে টের পেতে দেননি তাঁরা। আর এতেই আবেগে ভেসেছে নেটদুনিয়া। সকলেই সেনা জওয়ানদের এই পদক্ষেপে মুগ্ধ। কেউ কেউ এই ঘটনাকে গল্পের মতো বলেও মনে করছেন। তবে বাস্তবে যা ঘটেছে তা গল্পের চাইতেও সুন্দর বলা যেতেই পারে। অন্তত মানবিকতার খাতিরে বিচার করলে এই ধরনের ঘটনা অবাক করবে যে কাউকে। এমনটাই মনে করছেন নেটদুনিয়ার একাংশ।