লকডাউনে বাড়িতে বসে সকলেই কিছু না কিছু না অভিনব কাজে হাত পাকিয়েছেন। কেউ বানিয়ে ফেলেছেন নতুন নতুন খাবার, তো কেউ সাজিয়েছেন ঘরবাড়ি। এই দম্পতিও তেমন কিছুই করেছেন। বানিয়ে ফেলেছেন নিজেদের জন্য আস্ত একটি হেলিক্যাম্পার। কী ভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল। ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই। ছিল আদ্যিকালের একটা হেলিকপ্টার, হয়ে গেল ঝাঁ চকচকে একটা আরভি ক্যাম্পার। ভাবছেন নিশ্চয়ই, সেটা আবার কী? ক্যাম্পার হল একধরনের যান, যা সাধারণত পর্যটনের জন্য ব্যবহার করা হয়। জলেজঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে মানুষ যেমন ক্যাম্প করে থাকে, এই বাহন সঙ্গে থাকলে সেসবের দরকার নেই একেবারেই। কারণ এই গাড়ির ভিতরে রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার থেকে শুরু করে টিভি, বিছানা সবই। অনেকটা ক্যারাভ্যানের মতোই ব্যাপারখানা। আর পুরনো কোন গাড়িকে ভেঙেচুরে পাল্টে নিজের মনের মত গাড়ির রূপ দেওয়া হলে, তাকে বলে রিক্রিয়েশনাল ভেহিক্যাল। যেমন এই দম্পতি হেলিকপ্টার থেকে বানিয়ে ফেলেছেন একটি আস্ত রিক্রিয়েশনাল ভেহিক্যাল তথা আরভি ক্যাম্পার।
আরও শুনুন: জুম কলে ছাঁটাই করেছিলেন ৯০০ কর্মীকে, এবার প্রতারণা কাণ্ডে অভিযুক্ত সেই কুখ্যাত সিইও
না, মোটেও সহজ ছিল না ব্যাপারখানা। গোটা কাজখানি করতে সময় লেগেছে প্রায় দু-বছর। আফগানিস্তানের যাত্রীবাহী হেলিকপ্টারটিকে হঠাৎই কিনে নেন আমেরিকার বাসিন্দা ব্লেক মরিস ও ম্যাগি মরগ্যান। প্রায় ৪৪ বছর আফগানিস্তানের আকাশে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে বিমানটি। ব্লেক ও ম্যাগি, দুজনেই পেশায় দু’জনেই তাঁরা উপকূলরক্ষী বাহিনীর পাইলট।
২০২০ সাল নাগাদ ফেসবুকের একটি মার্কেটপ্লেসে কপ্টারটিকে দেখেন ওই দম্পতি। সাত পাঁচ না ভেবে সেটি কিনেও ফেলেন তাঁরা। হঠাৎই মাথায় খেলে যায়, কেমন হয় সেটিকে একটি হেলিক্যাম্পারে পালটে দিতে পারলে। কাজে লেগে পড়েন দম্পতি।
গত দু-বছর ধরে অন্তত ৯০০ ঘণ্টা ওই হেলিকপ্টারটির পিছনে ব্যায় করেছেন ব্লেক ও ম্যাগি। বড় অংশের কাজ শেষ হয়ে গেলেও ক্যাম্পারের ভিতরের কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে বলে জানান তাঁরা। ম্যাগির বরাবরের শখ, নিজের কপ্টারের জানলায় বসে কফির কাপে চুমুক দেবেন দুজনে। আর সেই ইচ্ছেই শেষমেশ পূরণ হতে চলেছে। শুধু জানলার ধারে কফি টেবিল নয়, টিভি থেকে শুরু করে বিলাসবহুল বিছানা, শৌচাগার থেকে শুরু করে সাজানো গোছানো রান্নাঘর সবই রয়েছে ওই কপ্টারের ভিতরেই। গোটা কপ্টারে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও। মনের মতো করে গোটা কপ্টারটিকে সাজাতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি দম্পতি।
আরও শুনুন: না ডাক্তার, না ছুরিকাঁচি! প্রশান্ত মহাসাগরের বুকেই সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
গোটা পরিকল্পনাটিকে সফল করতে ব্যাপারটি নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনাও করে ফেলেছেন ব্লেক ও ম্যাগি। তাঁরা জানান, একটি ফরাসি বিমানপ্রস্তুতকারক সংস্থা নির্মীত চার ব্লেড বিশিষ্ট এই হেলিকপ্টারগুলি আদতে এককালে জার্মান সেনাবাহিনীতে ব্যবহার হত। নিজেদের ইনস্টাগ্রাম পেজে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন দম্পতি। তার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন সাধের হেলিক্যাম্পারের সঙ্গে নিজেদের একাধিক ছবি। ইতিমধ্যেই সেটির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র ও রেজিস্ট্রেশনের নথি হাতে পেয়ে গিয়েছেন দম্পতি। শুধু তাই নয়, হেলিক্যাম্পারটিকে নিয়ে গত এপ্রিলেই একটি ছোটখাটো ক্যাম্পিং ট্রিপও সেরে এসেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বলাই যায়, ব্লেক ও ম্যাগির হেলিক্যাম্পার এ বার বড় উড়ানের জন্যেও এক্কেবারে তৈরি। এখন শুধু ওড়ার অপেক্ষা।