বিশেষ দিনটিকে ঘিরে কতই না স্বপ্ন দেখেছিলেন যুগলে। কিন্তু বাস্তবে জুটল স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। ধুমধাম করে বিয়ে সারার বদলে ভেস্তে যেতে বসল বিয়েটাই। কেন ঘটল এমনটা? আর কী-ই বা হল তারপর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রেমের পরিণতি নাকি বিয়েতে। তা এই দিনটি নিয়ে কতরকম স্বপ্নই তো দ্যাখে মানুষ। ব্যতিক্রম ছিলেন না এই যুগলও। সাধারণভাবে নিজেদের বাড়িতে বিয়ে সেরে ফেলার পক্ষপাতী ছিলেন না দুজনের কেউই। তাই পরিকল্পনা করেছিলেন ডেস্টিনেশন ওয়েডিং-এর। স্কটল্যান্ডের এক ছবির মতো সাজানো দ্বীপে গাঁটছড়া বাধবেন দুজনে, ভেবেছিলেন এমনটাই। ভেবেছিলেন বাকি জীবন ধরে মনে রয়ে যাবে সেইসব স্বপ্নের মতো স্মৃতি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। স্মৃতি রইল বটে, তবে তাকে স্বপ্ন নয়, বরং দুঃস্বপ্ন বললেই ভাল হয়।
আরও শুনুন: নীরজ চোপড়ার জয় থেকে দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন, ভবিষ্যদ্বাণী ‘ভারতের নস্ত্রাদামুস’-এর
ভাবছেন, কী ঘটল এমন? তাহলে খুলেই বলা যাক।
দুবছর ধরে নিজেদের বিয়ে নিয়ে একটু একটু করে পরিকল্পনা সেরেছিলেন এই মার্কিনি যুগল। তাঁদের যৌথ জীবনের শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি ৪০ বছরের আমান্ডা আর ৩৭ বছরের পল। বিয়ের আসর বসার কথা ছিল আমেরিকা থেকে ৬৪০০ কিলোমিটার দূরে, স্কটল্যান্ডের স্কাই দ্বীপপুঞ্জে। আর সেইমতোই বিশেষ দিনটির আগে সময় মেনে তাঁরা পাড়ি দিয়েছিলেন গন্তব্যের উদ্দেশে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল এতদিন, কিন্তু গোল বাধল একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে। একে তো আমেরিকা থেকে বিমান ছাড়তেই দেরি করল, তার উপরে আবার নির্দিষ্ট যাত্রাপথ পালটে ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতেও সময় লেগে গেল অনেক বেশি। যেদিন পৌঁছানোর কথা ছিল, এইসব কাণ্ডের দরুন তার তিনদিন পরে গন্তব্যে এসে পৌঁছালেন যুগলে। বিয়ের তখন আর মাত্র একদিন বাকি। কিন্তু এখানেই যে দুর্ভোগের শেষ হয়নি, তা টের পাওয়া গেল স্কটল্যান্ডে বিমান থেকে নামার পরেই। দুজনে দেখলেন, সমস্ত লটবহর উধাও। অর্থাৎ বিয়ের জন্য সযত্নে গুছিয়ে আনা যা কিছু, এমনকি দুজনের বিয়ের পোশাকও হাপিস। কেবলমাত্র বিয়ের আংটি আর ফুলটুকুই রয়ে গিয়েছে আমান্ডার হাতব্যাগে। এমতাবস্থায় বিয়ে বাতিল ঘোষণা করা ছাড়া আর উপায় কী! হতাশায় ভেঙে পড়ে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাই ভাবছিলেন তাঁরা।
আরও শুনুন: মর্মান্তিক! নিজের হাতে স্বামী, মেয়েকে মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিলেন মহিলা
কিন্তু সব দরজা বন্ধ হলেও কোনও এক ফাঁক দিয়ে বোধহয় এসে পড়ে আশার আলো। তেমনটাই হল এই যুগলের ক্ষেত্রে। বিয়ের জন্য যে ফটোগ্রাফার এসেছিলেন, এক বুদ্ধি ঠাওরালেন তিনিই। কাউকে কিছু না বলেই স্থানীয়দের কাছে আরজি জানালেন, তাঁরা যদি কোনোভাবে এযাত্রা উতরে দেন। আশ্চর্যের কথা, ফলও মিলল হাতেনাতে। এই বিদেশি যুগলের স্বপ্নপূরণ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন স্থানীয়রাই। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই, আমান্ডার সামনে এসে হাজির হল অন্তত আটটি কনের পোশাক। আর পলের জন্য এল স্কটল্যান্ডের স্থানীয় পোশাক, যা দেখতে অনেকটা হাঁটুছোঁয়া স্কার্টের মতো। কেবল পোশাক ধার দেওয়াই নয়, এলাকার অধিকাংশ রেস্তরাঁ বন্ধ থাকায় নবদম্পতির খাওয়ার ব্যবস্থাও হল এক স্থানীয় ব্যক্তির কাছেই।
না, পল আর আমান্ডা যেমনভাবে বিয়ের কথা ভেবেছিলেন, তেমনটা হয়নি নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিয়েতে যা কিছু ঘাটতি ছিল, তা পূরণ করে দিয়েছিল অপরিচিত স্থানের ওই অচেনা মানুষদের আন্তরিকতা। বেঁধে বেঁধে থাকলে যে সত্যিই ভাল থাকা যায়, সে কথাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন তাঁরা। নবদম্পতির কাছে আজীবনের স্মৃতি হিসেবে এ কথার চেয়ে দামি আর কী-ই বা হতে পারত!