মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণা যত স্পষ্ট হয়েছে, ততই সে নিজের ব্যক্তিগত পরিসরের প্রয়োজন বোধ করেছে আরও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই একা থাকার খরচ এবং ঝক্কি দিনে দিনে এত বেড়ে উঠেছে যে বিষয়টা আর শুধু আরামের থাকছে না, হয়ে উঠছে অসুবিধারও। তাই এ কালে একা বাড়ির ধারণাকে টেক্কা দিয়ে এসে পড়েছে ‘কমিউনিটি লিভিং’-এর ধারণা।
ধরণীর কোণে, রহিব আপন মনে- এ কথা যে সেই কোন আদি যুগ থেকে বলে আসছে মানুষ! আর তাই সে বলে, “ধন নয়, মান নয়, এতটুকু বাসা করেছিনু আশা”। কিন্তু দিন বদলাচ্ছে। নিজের একটুকু কোণ পাওয়া আরও কঠিন হয়েছে দিনে দিনে। বদলানো দিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই দেখা যাচ্ছে, একার বাসা থেকে বহুজনের বাড়িতেই বেশি খুশি মানুষ। এমনকি, সেই বহু মানুষ যে একে অপরের সঙ্গে আত্মীয়তা সূত্রে জুড়ে আছেন, এমনটাও না হতে পারে। একসঙ্গে জুড়ে যাওয়ার মূল সূত্র এখানে অর্থ এবং সুবিধাটুকুই।
ব্যাপারটা ঠিক কী? তাহলে খুলেই বলা যাক।
মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণা যত স্পষ্ট হয়েছে, ততই সে নিজের ব্যক্তিগত পরিসরের প্রয়োজন বোধ করেছে আরও। কেবল অন্তরে নয়, বাইরেও। সেই যেমন ভার্জিনিয়া উলফ বলেছিলেন, কোনও নারী যদি উপন্যাস লিখতে চায়, তবে তার কী লাগবে? ‘মানি অ্যান্ড আ রুম অফ হার ওন’। নিজের ঘর না থাকলে নিজের কাজ করা মুশকিল, এ কথা মানুষ বহুদিন ধরেই ভেবে এসেছে। সে কারণেই যৌথ পরিবার আস্তে আস্তে ভেঙে গিয়েছে ছোট ছোট অংশে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই একা থাকার খরচ এবং ঝক্কি দিনে দিনে এত বেড়ে উঠেছে যে বিষয়টা আর শুধু আরামের থাকছে না, হয়ে উঠছে অসুবিধারও। তাই এ কালে একা বাড়ির ধারণাকে টেক্কা দিয়ে এসে পড়েছে ‘কমিউনিটি লিভিং’-এর ধারণা।
কমিউনিটি লিভিংকে বলা যেতে পারে একরকম গোষ্ঠী বেঁধে থাকা। এখানে একাধিক মানুষ, যাঁরা সকলে জন্মসূত্রে একে অপরের আত্মীয় নন, তাঁরা একসঙ্গে থাকেন। প্রত্যেকে নিজেদের আয় বা উৎপাদন সেই গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে দেন, তেমনই দায়িত্বও ভাগ হয়ে যায় সকলের মধ্যে। অনেকসময়ই একই পেশা বা আগ্রহের মানুষেরা, শিল্পী-আঁকিয়েরা এমন কমিউনিটি তৈরি করে থাকেন। এখানে ভাগ করে নেওয়া মানে কেবল জাগতিক জিনিসপত্র ভাগাভাগি নয়, সমস্ত জীবনটাকেই একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। এর ফলে জীবনযাপনের খরচ কমে যায় বেশ খানিকটা। বিশেষ করে এই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছে, তাতে এইভাবে থাকার দরুন বর্ধিত বাজারদরের সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দেওয়া চলে বইকি।
এমন একসঙ্গে থাকার ধারণা আগেও অল্পবিস্তর ছিল। তবে সে একেবারে যৌথতার ধারণা থেকেই। বাস্তব সুবিধার উপর ভিত্তি করে এখন কমিউনিটি লিভিং-এর ধারণা বদলেছে। আগের মতো কমিউন তো রয়েছেই, সঙ্গে এসেছে কো-হাউজিং, কো-লিভিং স্পেস, ইকো-ভিলেজের ধারণা। একলা হয়ে যাওয়ার দুনিয়াতে এমন তৈরি করা যৌথতা নিতান্ত মন্দ নয়, বলছেন অনেকেই।