ঈশ্বরের নামে একমুঠো চাল, কি সংসারখরচ থেকে বাঁচিয়ে দু-একটা টাকা জমানোর অভ্যাস সেই কবে থেকে রপ্ত করেছেন নারীরা। কিন্তু ব্যাঙ্ক-বিনিয়োগের পথে টাকার জমা-খরচ কীভাবে হলে ভালো হয়, সে কথা জানেন কি? মহিলাদের অর্থনীতির শিক্ষা দিতেই তাই পাঠশালা বারো ক্লাসের পড়ুয়ার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হাতে টাকা থাকলে তার জমা খরচ কীভাবে করা লাভজনক? মহিলাদের সে পাঠ দিচ্ছে বারো ক্লাসের মেয়ে। অর্থনীতির পাঠ দিয়ে মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তোলাই তার লক্ষ্য।
আসলে এ দেশের মহিলাদের একটা বড় অংশের সঙ্গে নগদ টাকা লেনদেনের যোগাযোগ কম। বাড়ির মহিলা, বিশেষ করে গৃহবধূদের হাতে নগদ টাকা থাকবে? গড় ভারতীয় সমাজের অনেক মহিলাই সে অভিজ্ঞতা পান না। পরিবারের সম্পদে যে পরিবারের মেয়েদেরও অধিকার রয়েছে, সে কথা এখনও এ দেশের অনেক মানুষই বুঝে উঠতে পারেননি। ফলে গৃহশ্রমের জন্য কোনও আর্থিক সম্মান দেওয়ার কথাও ভাবা হয় না। অন্যদিকে যে মহিলারা বাইরে কাজ করেন, তাঁদের উপার্জনের টাকা পারিবারিক সম্পদ বলে গণ্য হয়, ফলে সেই টাকাও সবসময় হাতে থাকে না তাঁদের। সব মিলিয়ে ব্যাঙ্ক-বিনিয়োগের পথে সঞ্চয়ের দিকে যেতে পারেন না অনেক মহিলাই। উপরন্তু বাইরের কাজ পুরুষের, ফলে আর্থিক বিনিয়োগের বিষয়েও মাথা ঘামাবেন তাঁরাই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই এ কথা মনে করে থাকেন। আর এই সমস্ত কারণেই, হাতে টাকা থাকলেও তা কীভাবে সঞ্চয় করবেন, জানেন না অনেক মহিলাই।
আর এই জায়গাতেই আলো ফেলতে চেয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিধি মিগলানি। হরিয়ানার ডিপিএস কইঠাল স্কুলের এই ছাত্রী একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যা মহিলাদের অর্থনীতির পাঠ দেবে সহজে। ধনসারথি নামের ওই অ্যাপের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অন্তত ৫০০০ মহিলা বিনিয়োগ সম্পর্কে জেনেছেন, ব্যাঙ্কিং শুরুও করেছেন, জানিয়েছে বিধি। বড় বড় ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে জুটি বেঁধে ১৭৫টি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানও করে ফেলেছে তারা। এর মাধ্যমে মহিলারা সহজে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছেন, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মতো সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও নিতে পেরেছেন।
সেবি-র পরিসংখ্যান বলে, গোটা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সাক্ষর। অর্থাৎ ব্যাঙ্ক-বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজকর্ম কীভাবে করতে হয়, সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন তাঁরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সামান্য অংশের মধ্যে মহিলাদের অংশ আরোই সামান্য। সেই ফাঁক ভরাট করতেই এগিয়ে এসেছে এই কিশোরী। তার হাত ধরেই আত্মনির্ভরতার পথে পা বাড়াচ্ছেন হরিয়ানার অনেক মহিলা।