শুধু ভারত নয়, রামায়ণের সঙ্গে যোগ রয়েছে চিনের। উঠল এমনই দাবি। স্বপক্ষে প্রমাণও রয়েছে। চিনের কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রের সঙ্গে বিস্তর মিল রয়েছে রাম, হনুমানের। ঠিক কী জানাচ্ছে গবেষণা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এশিয়ার নানা দেশে রামায়ণ ছড়িয়ে রয়েছে, এ কথা বলেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। অর্থাৎ, সাম্প্রতিক কালে রামকে যে একমাত্রিকতায় প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তার পালটা এক বহুত্ববাদকেও চিনে নেওয়া যায় রামকে কেন্দ্র করেই। উদাহরণ রয়েছে একাধিক, সম্প্রতি আলোচনায় চিনের রামায়ণ যোগ।
ভারতীয় দূতাবাসের তরফে চিনে রামায়ণ সংক্রান্ত আলোচনার আয়োজন হয়েছিল। তাতেই উঠে এসেছে একাধিক তথ্য। গবেষকদের মতে, বহু আগেই বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে ভারতের রামায়ণ চিনে পৌঁছেছে। সে দেশের সংস্কৃতিতে প্রভাবও ফেলেছে। চিনে এমন কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র রয়েছে যার সঙ্গে রামায়ণের কিছু বিখ্যাত চরিত্রের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সান বোকুং এর কথাই ধরা যাক। আসলে এই চরিত্র একটি বানর। তবে মানুষের থেকে কম যান না। যুদ্ধ থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সবই করতে পারেন। চীনা গবেষকদের মতে, এই চরিত্র হনুমান থেকে অনুপ্রাণিত। রামায়ণের একটা বড় অংশ জুড়ে হনুমানের উল্লেখ মেলে। বলা ভালো, বানর সেনা ছাড়া রাম-রাবনের যুদ্ধই ব্যাখ্যা করা যায় না। রামায়ণের বাকি যে আখ্যানগুলির খোঁজ মেলে, সেইসবেও হনুমানের উল্লেখ রয়েছে। এভাবেই দশরথের সঙ্গেও মিল রয়েছে সে দেশের কোনও এক ঐতিহাসিক চরিত্রের, এমনটাই দাবি গবেষকদের। আলোচনায় আরও অনেকগুলি দিক উঠে এসেছে। বিশ্বজুড়ে আস্তিকবাদ এবং নাস্তিকবাদের যে দুটি ধারা লক্ষ করা যায়, তাতে রামায়ণের বড় প্রভাব রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। এ প্রসঙ্গে এক কাহিনির করা যেতে পারে। একবার রামের হারানো আংটি খুঁজতে পাতালে গিয়েছেন হনুমান। সেখানে রাজার সামনে সাজানো হাজার হাজার আংটি। রাজা জানালেন, প্রতিটি আংটি আসলে রামের একেকটি জীবন। মর্তে রামের জীবন ফুরোলেই তাঁর আংটি পাতালে এসে পড়ে, আর এমন করেই এতগুলি আংটি জমে উঠেছে। আসলে এই লৌকিক গল্প এমন ইঙ্গিতই দিয়েছিল যে, যেমন হাজার হাজার আংটি হাজার হাজার রামের, তেমনই হাজার হাজার রাম নিয়ে থাকবে হাজার হাজার রামায়ণও। কোনও একটিমাত্র রামায়ণ নয়, ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে একাধিক রামকথাই। আর সেইসব রামায়ণে বহু রূপে, বহু স্বরূপে ধরা দিয়েছেন রাম।
চিনে অবশ্য সরাসরি রামায়ণ নেই। বরং সে দেশের সংস্কৃতিতে মিশেছে রামায়ণের ভাবনা। শুধু ঐতিহাসিক চরিত্র নয়, সেখানকার লৌকিক আচারেও মিশেছেন রাম। হয়তো অন্য নামে, অন্য ভাবে। আলোচনায় গবেষকরা বেশ কিছু প্রমাণও দেখিয়েছেন। বেশিরভাগই বৌদ্ধ গ্রহ্ন। তাতে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে রামায়ণ যোগের। আবার চিনের বৌদ্ধ মন্দিরের দেখভাল করছেন হিন্দু পুরোহিত। এই প্রমাণও রয়েছে। যা ইঙ্গিত করছে এ দেশের সংস্কৃতি চিনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার। ‘থ্রি হান্ড্রেড রামায়ণাস’ অর্থাৎ তিনশো রামায়ণ প্রবন্ধে রামায়ণের এই বিপুল বিস্তারটিকেই ধরতে চেয়েছিলেন ভাষাতাত্ত্বিক গবেষক এ কে রামানুজন। বিশ্বজুড়ে কোন কোন ভাষায় রামায়ণ লেখা হয়েছে, এই প্রবন্ধে তার একটি তালিকা দিয়েছিলেন তিনি। তাতে দেখা গিয়েছিল, দেশীয় ভাষার মধ্যে সংস্কৃত, বাংলা, মারাঠি, ওড়িয়া, কন্নড়, গুজরাটি, সাঁওতালি, কাশ্মীরি এমন একাধিক ভাষায় তো রামায়ণ রয়েছেই। দেশের বাইরেও জাভা, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, বালি, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো নানা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে সেখানকার ভাষায় লেখা রামায়ণ। এভাবেই চিনের সাহিত্য সংস্কৃতিতে মিশেছে রামায়ণ। এবং ভারতের সঙ্গে তার যোগ স্পষ্ট করেছে।