তা কারণসুধা জ্বালাযন্ত্রণা মেটায় তা তো শুনেছি। তাই বলে শুধু নেশাভাঙ করবেন বলে ১৪ বছরের বনবাস! ঠিকই শুনেছেন। বাড়ির ওজরআপত্তিতে নেশাভাঙে বিঘ্ন। আর তা মানতে না পেরেই ঘর ছাড়েন এই ব্যাক্তি। প্রায় ১৪ বছর ধরে রয়েছেন বিমানবন্দরেই। সেটাই এখন ঘরবাড়ি তাঁর। এমন সুরাপ্রেমের কথা শুনেছেন কখনও। শুনে নিন, সেই নেশারু বৃদ্ধের গল্প।
নেশাভাঙ করে শ্মশানে-মশানে পড়ে থাকতেন মহাদেব। উমার ভয়ে ঘরমুখো হতেন না তিনি। এ নিয়ে অভিযোগের শেষ ছিল উমার মা তথা গিরিজায়ার। তা সে তো গেল ভোলামহেশ্বরের কথা। তবে এই ব্যক্তিও কিছু কম যান না। বাড়িতে গেলেই নানা বিধিনিষেধ। মদ, সিগারেট খাওয়া নিয়ে রোজ অশান্তি। এসব রোজ রোজ কারই বা পোষায় বলুন! তাই প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ঘরছাড়া এই ব্যক্তি।
তা ১৪ বছরের বনবাসই বটে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেননি কেউ। শুধু নেশা ছাড়তে বলেছিলেন পরিবারের লোকজন। আর সে কথাটা মানতে না পেরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
সেই ২০০৮ সাল থেকে বাড়ির বাইরে তিনি। আর এই ১৪ বছর ধরে বেজিংয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাস টু-কেই ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন উই জিয়াংগু নামে বছর ষাটেকের ওই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: স্ত্রীর বিরহে কাতর! মাছ ধরার ডিঙি নিয়েই ভিয়েতনাম থেকে ভারতে পাড়ি যুবকের
৪০ বছর বয়সে এই নেশাই কেড়েছিল চাকরি। তারপর থেকে আর চাকরি জুটিয়ে উঠতে পারেননি উই। সরকারের তরফে যেটুকু ভাতা মিলত, তা পুরোটাই মদ-সিগারেটের পিছনে উড়িয়ে দিতেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ির লোকজনের পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল উইয়ের এই রোজের নেশাভাঙ। একদিন বাধ্য হয়েই বাড়ির লোকেরা জানিয়ে দেন, হয় মদ আর সিগারেটের নেশা ছাড়তে হবে। নাহলে প্রতি মাসে সরকারি ভাতা হিসেবে পাওয়া অর্থটুকুর গোটাটাই তুলে দিতে হবে পরিবারের হাতে। মহা বিপাকে পড়েন উই। সরকারি ভাতাটুকুও যদি পরিবারকে দিয়ে দেন, তাহলে মদ-সিগারেট কিনবেন কীভাবে। নেশা ছাড়তে না পেরে বাড়িই ছাড়েন উই। বিমানবন্দরের ওই টার্মিনাসই হয়ে ওঠে তাঁর ঘরবাড়ি।
আরও শুনুন: উচ্চতা ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি, তাতেই বেসামাল পুরুষসঙ্গীরা! আজব সমস্যায় বিশ্বের সবথেকে লম্বা মডেল
না, উই একা নন। নিজের সহ-বাসিন্দাও খুঁজে পেয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর মতোই বিমানবন্দেরর টার্মিনাসে থাকেন আরও চার-পাঁচ জন ভবঘুরে।
বিমানবন্দরের সাফাইকর্মীরা উইদের কথা জানেন। তবে এখনও পর্যন্ত সেসব নিয়ে ঝামেলা করেননি কখনও। মাঝে অবশ্য উইদের ঘর নিয়ে নিয়ে একবার টানাটানি পড়ে যাচ্ছিল। ক্রিস্টমাসের সময় একবার ওয়েটিং রুমে বসে নুডলস খাচ্ছিলেন উইরা। সেসময় কে যেন তা ভিডিয়ো করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটি ভাইরাল হয়ে যেতেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে সেসব ঝামেলাঝাটি মিটতেই নিজের ঘর থুড়ি বিমানবন্দর টার্মিনাসে ফিরে এসেছেন উইরা।
বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না কখনও। জিজ্ঞেস করলে উইয়ের সাফ জবাব, যেখানে স্বাধীনতা নেই, সেখানে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এখানে এই বিমানবন্দরে আর কিছু না হোক, সেই স্বাধীনতাটুকু তো আছে। সত্যি বাবা! ধন্যি সুরাপ্রেম বটে!