সূর্যের থেকে বেশি তাপমাত্রা- যা কল্পনা করাই প্রায় অসম্ভব, তাই-ই বাস্তবে সম্ভব করে তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। চিনের কৃত্রিম সূর্য জন্ম থেকেই বিস্ময় জাগাচ্ছিল। এবার সেই বিস্ময়ের মাত্রা আরও বাড়ল। কেননা বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত চেষ্টায় নয়া রেকর্ড গড়ে ফেলল এই কৃত্রিম সূর্য। কী সেই রেকর্ড! আসুন শুনে নিই।
নক্ষত্রদের পেটের ভিতর অবিরাম যে ক্রিয়া-বিত্রিয়া-বিকিরণের জটিল কাজকম্ম চলছে, তার নাগাল পাওয়া দুষ্কর। তত্ত্বগত ভাবে তার ব্য়াখ্য়া করা যেত, কিন্তু হাতেকলমে তা করে উঠতে পারা কী সম্ভব! এই সেদিনও হয়তো তা অসম্ভব বলে মনেই হত। আস্ত একটা নক্ষত্র পৃথিবীর মাটিতে তৈরি করা আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কী! কিন্তু কল্পনা না থাকলে বিজ্ঞান এগোয় না। বিজ্ঞানীরা এই পৃথিবীতে বহু অসম্ভবকেই যে সম্ভব করে তুলেছেন, তার ইন্ধন জুগিয়েছে কল্পনাশক্তিই। সেভাবেই, পৃথিবীর মাটিতে নক্ষত্রজন্মের কল্পনা থেকেই একদিন জন্ম নিয়েছিল চিনের কৃত্রিম সূর্য। যা এবার গড়ে ফেলল এক নয়া রেকর্ড। কৃত্রিম এই সূর্যের ভিতর আসল সূর্যের থেকে পাঁচগুণ বেশি তাপমাত্রায় প্লাজমা লুপকে ধরে রাখা গেল ১৭ মিনিটেরও বেশি। বিশ্বের বিজ্ঞানীমহলে এ এমন এক নজির, যা নতুন রূপ দিতে পারে পৃথিবীকে।
আরও শুনুন: মানুষের মতো দেখতে যেন না লাগে! ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে নিজের চেহারা বিকৃত করছেন যুবক
এই কৃত্রিম সূর্য আসলে একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টার। যার পোশাকি নাম, এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকাম্যাক। আমাদের সমস্ত শক্তির মূল হল সূর্য। বিজ্ঞানীদের ভাবনা, সূর্যের অভ্য়ন্তরে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে, তা যদি বাস্তবে করে তোলা সম্ভব হয়, তবে শক্তির অফুরন্ত ভাঁড়ার খুলে যাবে। সীমাহীন শক্তি পৃথিবীর দৃষণজনিত অনেক অসুখ সারিয়ে ফেলতে যেমন পারবে, তেমন নতুন চালিকাশক্তিও দেবে এই বিশ্বকে। এহেন কাজ যে কেবল চিনে হচ্ছে তা নয়, বিশ্বের অন্য়ান্য় দেশের বিজ্ঞানীরাও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফ্রান্স এই ব্য়াপারে অনেকটাই এগিয়েছিল। তবে শেষমেশ তাদের টেক্কা দিয়েছে চিন। আমরা জানি সৌরকেন্দ্রের উষ্ণতা মোটামুটি ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে চিনের এই কৃত্রিম সূর্য একবার ১২০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্লাজমাদের উত্তপ্ত করে ধরে রাখতে পেরেছিল ১০১ সেকেন্ড। গত বছরের মাঝামাঝি সে খবর আসতেই, বিজ্ঞানীমহলে সাড়া পড়ে যায়। কেননা আর কোনও ফিউশন রিঅ্য়াক্টার এরকম অসাধ্য় সাধন করতে পারেনি। তবে এবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙল এই কৃত্রিম সূর্য। ৭০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবার প্লাজমা লুপকে সে ধরে রাখতে পারল ১০৫৬ সেকেন্ড।
আরও শুনুন: চেটেপুটে মালাইকারি কে না খান! সুস্বাদু এই পদের ‘মালাই’ আসলে কী?
মাত্র কয়েক মাসে বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য চমকে দিয়েছে গো়টা পৃথিবীকেই। সৌরকেন্দ্রের থেকে কয়েকগুণ বেশি উষ্ণতায় প্লাজমাদের এতদিন ধরে রাখা যাচ্ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। এবার সেই তাপমাত্রা সামান্য় কমেছে, তবে সৌরকেন্দ্রের তাপমাত্রার থেকে আদতে তা বেশিই আছে। প্রায় পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রায় ১৭ বা ১৮ মিনিট প্লাজমাদের স্থায়িত্ব সত্য়িই বিস্ময়কর। এই পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে, অচিরেই এই সময়সীমা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। আর তার ফলে প্রচুর শক্তি উতপন্ন করা সম্ভব হবে। যেহেতু তাপমাত্রাকে প্লাজমাদের মধ্য়ে বেশিক্ষণ বন্দি করে রাখা যাচ্ছে, ফলত শক্তির জোগান ও চাহিদার অঙ্কও বদলাবে। আপতত সেদিকেই তাকিয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, সাফল্য়ে পৌঁছাতে অনেকটা পথ এখনও বাকি। তবে যে দ্রততায় তাঁরা এগোচ্ছেন, তাতে অচিরেই পৃথিবীর শক্তি-সমস্যার গ্রহণযোগ্য় সমাধান যে হাতে চলে আসবে, এমনটা আশা করাই যায়।