দূরে কাউকে উপহার পাঠাবেন? চিঠি হলে তো খামে ভরে স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়। টাকার মতো কাগুজে জিনিস হলে রয়েছে মানি অর্ডার। কিন্তু তার চেয়ে বড়সড় জিনিস হলে? মুশকিল আসান করে পার্সেল ব্যবস্থা। কিন্তু ভাবুন তো, পার্সেল খুলে যদি দেখেন সেখানে রয়েছে একটা আস্ত মানুষ, তাহলে কেমন হবে? শুনে নিন তেমনই এক অদ্ভুত ঘটনা।
পোস্ট অফিসের দোরগোড়ায় এসে হাজির এক দম্পতি। সোজা পার্সেল সেকশনে হানা দিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরা কী পার্সেল করতে চান, সে কথা শুনে তো ডাকঘর কর্তৃপক্ষের চক্ষু চড়কগাছ! নিজেদের আট মাসের শিশুপুত্রকেই যে পার্সেল করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। এদিকে পোস্ট অফিসের নিয়মে স্পষ্ট করে বলা ছিল না, সেই পার্সেলে কী জাতীয় জিনিস পাঠানো যাবে আর কী পাঠানো যাবে না। কেবল ওজনের একটা ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাচক্রে শিশুটির ওজন ছিল ১১ পাউন্ডেরও কম। ফলে সেই ওজনের শর্তও সেক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়নি। সুতরাং পোস্ট অফিসের তরফে এহেন দাবি নাকচ করার কোনও উপযুক্ত কারণ ছিল না। ফলে, সেই দম্পতির দাবি মেনে নিয়ে বাচ্চাটিকে পার্সেল করতে বাধ্য হয় ওহিও শহরের সেই পোস্ট অফিস।
আরও শুনুন: চোরেদের আজব কীর্তি! চুরি হয়ে গেল ৫৮ ফুট লম্বা আস্ত একখানা সেতু
শিশুটিকে কয়েক মাইল দূরে বাটাভিয়াতে তার ঠাকুমার কাছে পাঠাতে চেয়েছিলেন তার মা-বাবা। বাটাভিয়ায় এই পার্সেল পাঠাতে খরচ পড়েছিল ১৫ সেন্টের মতো। অবশ্য বাচ্চাটিকে ৫০ ডলার নিরাপত্তামূল্য দিয়ে এনশিওরড পার্সেল হিসেবে পাঠিয়েছিলেন ওই দম্পতি। আর মেল ডেলিভারি করে পাঠানো প্রথম শিশুর মর্যাদা দেওয়া হয় সেদিনের সেই বাচ্চাটি, জেমস বিগলকেই।
আসলে বিশ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ডাক ব্যবস্থার তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ডাক বিভাগ থেকেই বড়সড় প্যাকেটও পার্সেল করে পাঠানো যাবে। ১৯১৩ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই এই পার্সেল পোস্ট চালু হয়েছিল। কিন্তু তার ফলে যে এমন গোল বাধতে পারে, সে কথা কে ভেবেছিল!
আজকের দিনে হয়তো এহেন কাজ করার কথা কোনও মা-বাবা ভাবতেও পারবেন না। বরং এমন কাজকে অমানবিক হিসেবেই দেখবেন অনেকে। তবে সেদিন কিন্তু জেমস বিগলের এই খবর উলটে আরও বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। কিছুদিন পরে ওজনের শর্তটিও তুলে দেওয়ার ফলে তুলনায় বয়সে বড় বাচ্চাদেরও এভাবেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানোর চল শুরু হয়ে যায়। জাতীয় ডাক জাদুঘর থেকে জানা যায়, চার বছরের একটি বাচ্চা মেয়েকে পার্সেল হিসেবে ট্রেনে করে ৭৩ মাইল দূরে পাঠানো হয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে শার্লট মে পিয়ারস্ট্রফ নামের এই মেয়েটি আমেরিকা জুড়ে খ্যাতি পেয়ে যায় ‘মেইলিং মে’ নামে। তবে এর চেয়েও দূরে গিয়েছিল একটি ছয় বছর বয়সি মেয়ে। ৭২০ মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়েছিল সে।
আরও শুনুন: ভারতেই রয়েছে শূন্য টাকার নোট! কী কাজে লাগতে পারে জানেন?
বলাই বাহুল্য, টিকিটের ভাড়ার তুলনায় এই উপায়টা সস্তা ছিল বলে অনেকেরই মনে ধরেছিল। আর এক্ষেত্রে পার্সেলে পাঠানো অন্যান্য জিনিসপত্রের মতো দেরি করে পৌঁছানো বা কোনোরকম সমস্যা হওয়ার রেকর্ডও ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল ডাক বিভাগের তরফেই। সেইজন্যই ১৯১৫ সাল থেকেই পার্সেল হিসেবে শিশুদের গ্রহণ করায় ভাটা পড়ে। আর ১৯২০ সালে কড়া নিয়ম করেই বন্ধ করে দেওয়া হয় এই ব্যবস্থা। জীবন্ত মানবশিশুদের স্থাবর জিনিসপত্রের মতো স্থানান্তরে পাঠানোর অভ্যাসে ইতি টেনে দেয় এই নিয়ম।