দেশের প্রধান বিচারপতি। অপরাধের বিচার করাই তাঁর কাজ। শাস্তি কতটা গুরুতর হবে সংবিধান মেনে তা ঠিক করেন তিনিই। সেই বিচারপতিকেও নাকি তাড়া করে বেড়ায় শাস্তির স্মৃতি। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সে প্রসঙ্গই তুললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই.চন্দ্রচূড়। ঠিক কী বলেছেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভুল করলে শাস্তি পেতেই হবে! এতে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। প্রশ্ন হচ্ছে শাস্তির ধরণ নিয়ে। কোন অপরাধের শাস্তি কেমন, সংবিধানে তা স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে। কিন্তু যেখানে সংবিধানের বালাই নেই, সেই স্কুল-কলেজে শাস্তি নিয়ে সমস্যা হতেই পারে। সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই নিজের জীবনের ঘটনায় ফিরে যান সুপ্রিম বিচারপতি ডি.ওয়াই.চন্দ্রচূড়।
আরও শুনুন: রাজনীতির উপরে থাকুক আইন-সংবিধান, দেশ বাঁচাতেই মনে করাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি?
শিক্ষকের হাতে বেত থাকবে, একসময় এমনটাই স্বাভাবিক মনে করা হত। ভুল করলেই রক্ষে নেই! পীঠ বরাবর বেতের দাগ বসে যেতে পারে নিমেষে। সে যুগ বদলেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে মারের চল নেই বললেই চলে। অন্তত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, খুদে পড়ুয়াদের বিনা কারণে মারধর করার কোনও অধিকার নেই শিক্ষকের। কারণ থাকলেও সেখানে মারা যাবে না। অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকরাও এ ব্যাপারে বেশ সচেতন থাকছেন। সন্তান মার খেয়েছে, এ ব্যাপারে আপত্তি তুলছেন অনেকেই। তবু সবটা এখনও বদলায়নি। এখনও এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে পড়ুয়াদের মেরে ধরে শেখানো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বাড়িতেও এই চল রয়েছে অনেকেরই। এক্ষেত্রে এমনটাই প্রচার করা হয়, শাসন না করলে শোধরানো যাবে না। কিন্তু এই শোধরানোর ধরণ আদপে কতটা ক্ষতি করছে সে নিয়ে ভেবে দেখেন না অনেকেই। শরীরের ক্ষত সারতে সময় লাগবে না। কিন্তু মনের ক্ষত শুকাবে কীভাবে?
আরও শুনুন: আইনের বাইরে নন বিচারকও! ‘সুপ্রিম’ তোপে পড়েন কলকাতা হাই কোর্টের এই বিচারপতি
অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত মারের ফলে মানসিক বিকৃতি ঘটেছে পড়ুয়ার। বড় হয়ে এই ব্যাপারটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে সে। ফলে সমাজে অপরাধের সংখ্যা আরও বাড়ছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গেই বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি.ওয়াই.চন্দ্রচূড়। আর সেখানেই নিজের ছোটবেলার এক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। যদিও সেই স্মৃতি সুখের নয়। তখন তিনি ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া। কোনও একদিন ভুলবশত পেন্সিল না নিয়েই স্কুলে হাজির হয়েছিলেন। এই বয়সে এমন ভুল হতেই পারে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক এই ভুল এত সহজ ভাবে নেননি। শাস্তি হিসেবে কয়েক ঘা বেত মেরেই ক্ষান্ত হন তিনি। খুদে চন্দ্রচূড়ের হাজার কাকুতি মিনতি কোনও কাজে আসেনি। হাতের উপর বেতের দাগ ছিল বেশ কয়েকদিন। লজ্জায় তা বাড়িতে দেখাতেও পারেননি। এবং সেই দিনের ঘটনা এখনও তাড়া করে বেড়ায় বিচারপতিকে। এখনও সেদিনের কথা ভুলতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন তিনি। আসলে, ওই অনুষ্ঠানে জুভেনাইল জাস্টিস নিয়েও আলোচনার আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ নাবালকদের বিচার ব্যবস্থার প্রসঙ্গ ধরেই শাস্তির কথা বলেন চন্দ্রচূড়। এক্ষেত্রে তাঁদের মানসিক দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি বলে মনে করেছেন তিনি। শাস্তির প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে, তবে তা যেন এমন কিছু না হয় যাতে নাবালকের মনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। মারধর তো কোনওভাবেই নয়। সবমিলিয়ে এদিনের অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে শাস্তি হিসেবে মারধর কতটা ক্ষতিকর সে কথা মনে করিয়ে দিলেন সুপ্রিম বিচারপতি।