কুমিরডাঙা খেলার সময় কে জলে থাকবে, আর কে ডাঙায়, তা নিয়ে অনেকেই হয়তো দ্বন্দ্বে পড়েছেন ছোটবেলায়। কিন্তু ছোটবেলার খেলাধুলো নয়, রীতিমতো বড় বয়সে এসেই ডাঙা ছেড়ে জলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক যুগল। জলেই পাকাপাকিভাবে সংসার পেতেছেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ডাঙায় থাকা মানেই হাজারও ঝক্কি ঝামেলা পোহানো। কোথাও যেতে গেলেও কষ্ট করতে হয় নিজেকেই। আর সব মিলিয়ে খরচখরচাও যথেষ্ট। তাই শেষ পর্যন্ত মাটির উপরে বসবাসের পাটই চুকিয়ে ফেললেন এক দম্পতি। বদলে পাকাপাকিভাবে জলের উপরে সংসার পেতেছেন তাঁরা। নিজেদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেছেন এই মার্কিন দম্পতি। আর তাঁদের কথা সামনে আসতেই অবাক নেটিজেনরাও।
আরও শুনুন: তৈরি হয়েছিল দেশের প্রথম ক্রিসমাস কেক, সেই বেকারির এখন কী অবস্থা জানেন?
হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের এই অভিনব জীবনযাত্রার কথা ভাগ করে নিয়েছিলেন হেনেসি দম্পতি। ফ্লোরিডার বাসিন্দা জন হেনেসি এবং তাঁর স্ত্রী মেলডি হেনেসি জানিয়েছেন, বাকি জীবনটা জলেই কাটিয়ে দিতে চান তাঁরা। তবে হঠাৎ করে তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাও নয়। বছর তিনেক আগেই নিজেদের বাড়িঘর এবং অন্যান্য অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই দম্পতি। তখনই অবশ্য তাঁরা জলে থাকার কথা ভাবেননি। বদলে কিনেছিলেন একটি মোটরহোম, যাতে ক্যারাভানের মতো ওই গাড়িটিতে থাকাও যায়, এদিক সেদিক ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানোও যায়। আসলে বরাবরই দেশ দেখার শখ ছিল এই দম্পতির। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার উদ্দেশ্যেই এভাবে থাকার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। এমনিতে আর পাঁচজন যেভাবে মাটির উপরে বাড়িতে থেকে জীবন কাটায়, আর সে জীবনে বিদ্যুতের খরচ, টেলিফোনের খরচ, গাড়ির খরচ, লোক-লৌকিকতার ঝক্কি ইত্যাদি সবই থাকে, এতদিন তাঁরাও সে জীবনই কাটিয়ে এসেছেন। কিন্তু একে তো এই জীবনে প্রচুর দায়িত্ব আর ঝামেলা, তার উপরে খরচও কম নয়। সেই বিপুল খরচখরচা সামলে বিশ্বভ্রমণের শখ অধরাই থেকে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেদের যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যভাবে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন হেনেসি দম্পতি। আমেরিকার অজানা-অচেনা বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ি চালিয়ে নিজেদের মতো করে বেশ কিছুদিন ঘুরে বেড়িয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সি জনের এই লাগাতার গাড়ি চালাতেও ভালো লাগছিল না আর। ফের অন্যভাবে থাকার কথা ভাবছিলেন দুজনে। সেই পরিস্থিতিতেই জলযানে ভেসে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন জন ও মেলডি। আর জলের উপরে থাকতে শুরু করার পর জনের বক্তব্য, ডাঙায় থাকার চেয়ে জলে জীবন কাটানোর খরচ অনেক কম। খাওয়া, থাকার খরচ বাদে বাড়তি কোনও খরচ নেই। বাড়ি, গাড়ি, জীবনবিমা- আর কোনও কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
আরও শুনুন: শুধু উত্তেজনাই বাড়ায় না, খেয়েও ফেলা যায় এই অন্তর্বাস… সত্যি?
সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রথমে তাঁরা জানতে পেরেছিলেন রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ-এর কথা, যেখানে একটানা ২৭৪ দিন ধরে সমুদ্রে ভেসে বেড়ানো যায়। তবে এবার একটি রেসিডেন্সিয়াল ক্রুজে পাকাপাকিভাবেই থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। ওই ক্রুজের ৩০ শতাংশ যাত্রীই জাহাজের স্থায়ী বাসিন্দা। সাধারণ কেবিনের তুলনায় একটু বড় কেবিন আর তার সঙ্গে লাগোয়া রান্নাঘর পান এই যাত্রীরা। আর তাঁদের নিয়েই গোটা বিশ্বজুড়ে সফর করে জাহাজটি। এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন সমস্ত দেশেই ঘুরেছেন তাঁরা। এরপর নতুন জাহাজের সুবাদে বাকি দুনিয়াটাও দেখা হয়ে যাবে বলেই আশা করছেন দুজনে। তাই নতুন করে আর ডাঙায় ফিরে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই বলেই জানিয়েছেন হেনেসি দম্পতি।