মাসির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন প্রভু। কিন্তু মাঝপথেই থামিয়ে দিতে হল রথ। চাকা গড়াল না এতটুকু। সারারাত রাস্তায় রইল বিগ্রহ। অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন ভক্তরা। কিন্তু রথের চাকা মাসির বাড়ি না পৌঁছে থামল কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছরে একবার নগর ভ্রমণে বেরোন মহাপ্রভু জগন্নাথ। সঙ্গে থাকে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রা। গন্তব্য গুন্ডিচা মন্দির। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই যদি থেমে যায় রথের চাকা? তাহলে প্রভুর মতো ভক্তরাও অস্থির হয়ে পড়েন। বিশেষ করে যারা সারাদিন না খেয়ে রথের রশিতে টান দিতে গিয়েছিলেন, প্রভু গন্তব্যে না পৌঁছালে মন ভার হবে সক্কলের। এবারের রথযাত্রায় এমনটাই হয়েছে। তবে পুরীর মন্দিরে নয়।
শাস্ত্রে বলে, ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে’ – অর্থাৎ, রথে উপবিষ্ট জগন্নাথদেবকে যিনি দর্শন করেন, তাঁর পুনর্জন্মের ভাবনা থাকে না। ঠিক সেই টানেই যে এত মানুষ রথের উন্মাদনায় নিজেকে ভাসিয়ে দেন একথা বলা ভুল। বরং বলা যেতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার যোগসূত্র এই রথযাত্রা উৎসব। পুরীতে তিনটি আলাদা রথে চড়ে চতুর্ধা মূর্তি নগর ভ্রমণে বেরোন। তবে দেশের সর্বত্র ব্যাপারটা ঠিক তেমন না। বেশিরভাগ জায়গাতেই একটি রথে সওয়ার হন জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। কোথাও আবার স্রেফ জগন্নাথের রথ বেরোয়। তেমনই শুধুমাত্র বলভদ্রের জন্য রথের আয়োজন হয় ওড়িশার এক মন্দিরে। অবশ্য এখানকার আরাধ্যই স্বয়ং বলরাম। প্রতি বছর বলভদ্রের এই রথ উপলক্ষে বেশ ভিড় হয় ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এত আয়োজন শেষমেশ বৃথা হয় সামান্য এক ভুলে।
রথযাত্রা উপলক্ষে এবারও সকাল থেকেই ভিড় জমে ওড়িশার বলভদ্র মন্দিরে। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দেব বিগ্রহকে রথে তোলা হয়। সবকিছু ঠিকমতো চলছিল। রথের রশিতে টানও পড়ে। হাজার হাজার ভক্তের মাঝে এগিয়ে যেতে থাকেন বলভদ্র। মাসির বাড়ি পৌঁছাতেও মাত্র কয়েক কিমি পথ বাকি। হঠাতই থামিয়ে দিতে হল রথ। কারণ এরইমাঝে অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। আসলে, রথে সওয়ার দেব বিগ্রহ ছোঁয়ার অধিকার সকলের থাকে না। কেবলমাত্র পুরোহিতরাই ছুঁতে পারেন প্রভুকে। সেইমতো নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকে জোরদার। কিন্তু এবারের রথে সকলের নজর এড়িয়ে বিগ্রহ ছুঁয়ে ফেলেন এক সাধারণ ভক্ত। জানাজানি হতেই রে রে পড়ে যায়। এই অবস্থায় বিগ্রহকে আর কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না বলেই জানিয়ে দেন সেবায়েতরা।। তাঁদের কথামতো থামিয়ে দেওয়া হয় রথ। ব্যবস্থা করা হয় বলরাম বিগ্রহের মহাস্নান। তাতে পাপের ভয় কাটে। কিন্তু সেদিন আর রথের চাকা এগোয়নি। রথে সওয়ার হয়েই রাত কাটান প্রভু। এদিকে, যারা এতক্ষণ রথের রশি টানার অপেক্ষায় ছিলেন তাঁরাও বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। একজনের ভুলের জন্য সবাইকে ভুগতে হল। এই নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন অনেকেই।