বিশ্বজুড়ে যেখানে অপরাধ আর অপরাধী দুটোই বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, এ দেশ সেখানে ব্যাতিক্রম। পৃথিবীর সব চেয়ে সুরক্ষিত দেশগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে অপরাধ বা অপরাধী- দুটোর সংখ্যাই বেশ কম। আর এতটাই কম যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলখানা হয়ে গিয়েছে ফাঁকা। তাই জেল ভরাতে অন্য জায়গা থেকে অপরাধী ধরে নিয়ে আসে এরা। এমন অদ্ভুতুরে কাণ্ড কোন দেশে হয়? শুনে নিন।
ভাবতে কষ্ট হলেও সত্যি কিন্তু এটাই। এ দেশে চুরি,ডাকাতি, খুন, রাহাজানি প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এখানকার পুলিশ বা নিরাপত্তা দপ্তরও বেশ সুখে আছে। দিনরাত্তির চোর ধরার তাড়া নেই। নেই খুনিকে পাকড়াও করার মতো কঠিন কেসও।
গোটা বিশ্বে যখন অপরাধের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে, সেখানে ইউরোপের এই দেশটির পরিসংখ্যান কিন্তু বেশ অন্যরকম। ভাবছেন নিশ্চয়ই, এমন বিরল দেশ কোনটি, যেখানে অপরাধের নামমাত্র নেই। অবাক লাগলেও সত্যিই নেদারল্যান্ডসে অপরাধ ব্যাপারটাই বিরল।
আরও শুনুন: তাজমহল তো বটেই, ৫৪৫ জন সদস্য-সহ পার্লামেন্টটিকেও বেচে দিয়েছিলেন তিনি! জানেন কে এই ব্যক্তি?
তথ্য় বলছে, ২০১৩ সালে নেদারল্যান্ডসের সবকটি জেল মিলে দেশে ছিল মোট ১৯ জন কয়েদি। পরবর্তীকালে সেই সংখ্যটা এসে ঠেকে শূন্যতে। সত্যি কথা বলতে নেদারল্যান্ডসে অপরাধী প্রায় নেই বলেই চলে। ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় ২২টি জেলে তালা পড়ে গিয়েছে।
সামাজিক ভাবে দেখতে গেলে ব্যাপারটা বেশ ভাল। একটা দেশে অপরাধ প্রায় নেই, এর চেয়ে ভাল আর কীই বা হতে পারে। কিন্তু কর্মসংস্থানের কথাটা একবার ভেবে দেখেছেন!
জেল সংক্রান্ত পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন সে দেশের প্রায় ২ হাজার মানুষ। অপরাধীর অভাবে জেল বন্ধ হয়ে গেলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন তাঁরা সকলেই। আর সরকারি হিসেব বলছে, তাঁদের মধ্যে মাত্র সাতশো জন অন্যান্য সরকারি দপ্তরে কাজ পেতে পারেন। বাকিরা কোথায় যাবেন, কী করবেন তার কোনও দিশা সরকারের কাছে নেই।
তাই সেসব কথা ভেবেই একটা অভিনব বুদ্ধি বের করেছেন নেদারল্যান্ডসের সরকার। দেশে অপরাধী নেই তো কী হয়েছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে তো অপরাধীর অভাব নেই। তাই সুদূর নরওয়ে থেকে এরা রীতিমতো অপরাধী আমদানি করে। নরওয়েতে অপরাধ করা দাগী আসামীরা সাজা কাটে নেদারল্যান্ডসের জেলে।
আরও শুনুন: চুরি বলে চুরি! সিনেমায় নয়, বাস্তবেই চুরি হয়ে গেল আস্ত ‘ডায়নোসরের থাবা’
তবে নেদারল্যান্ডসের জেলের যে কয়েদিশূন্য দশা, তার পিছনে কিন্তু আরও একটি কারণ রয়েছে। আসলে নেদারল্যান্ডস সরকার সাবেক জেলপদ্ধতির বিরোধী। তাই সেখানকার পুলিশ নাকি কয়েদিদের জন্য অদ্ভুত একটি ডিভাইস বা যন্ত্র ব্যবহার করে। যাকে একটা মনিটারিং সিস্টেমই বলা যায়। একটি ব্রেসলেটের মতো দেখতে যন্ত্র পরিয়ে দেওয়া হয় অপরাধীর পায়ে। তার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় কাজকর্মের জন্য। কিন্তু অপরাধীর পায়ে ২৪ ঘণ্টা লাগানো থাকবে ওই যন্ত্র। যার মাধ্যমে সমস্ত খবরাখবর পেতে থাকে পুলিশ। নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে অপরাধীরা যাওয়ার চেষ্টা করলেই, পুলিশের কাছে খবর পৌঁছে যায়। এমনকি ওই যন্ত্র নাকি অপরাধ প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে বলেও জানা গিয়েছে। সারাদিন অপরাধীকে জেলে বসিয়ে না রেখে তাঁকে স্বাভাবিক ভাবে কাজকর্ম করতে দেয় নেদারল্যান্ডসের কারাবিভাগ। আর এ ভাবেই দেশে অপরাধ ও অপরাধীর দুই-ই কমেছে বলে দাবি সে দেশের সরকারের।
২০১৫ সালে নরওয়ে থেকে ২৪২ জন কয়েদিকে নিয়ে আসা হয়েছিল নেদারল্যান্ডসের জেল। দেশে অপরাধী নেই বলে বিদেশ থেকে অপরাধী নিয়ে আসার এমন বিরল নমুনা কিন্তু নেদারল্যান্ডস ছাড়া অন্য কোনও দেশে দেখা যায় না।