ক্যাব চালান, তাই বলেই কি তাঁর সঙ্গে যা ইচ্ছে তাই আচরণ করা যায় নাকি! সে কথা বুঝিয়েই যাত্রীদের জন্য আচরণবিধি বেঁধে দিলেন এক ক্যাবচালক। আর সেই নির্দেশিকাই আপাতত নেটমাধ্যমে ভাইরাল। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ক্যাবে উঠলে মেনে চলতে হবে ছয় নিয়ম, যাত্রীদের উদ্দেশে এমনই শর্ত চাপিয়েছেন এক চালক। সেই নিয়মবিধির মূল কথাই হল, চালককে একজন সহনাগরিকের সম্মান দেখাতে হবে। চালককে চট করে ‘ভাইয়া’ সম্বোধন করা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। সাফ বলেছেন, তাঁর গাড়িতে উঠলে ভালোভাবে কথা বলতে হবে তাঁর সঙ্গে। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়ে তাঁকে অসম্মান করা চলবে না, আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন ওই চালক। আর সেই ছয় দফা নির্দেশবিধিই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে নেটমাধ্যমে।
ঠিক কী কী আচরণবিধি বেঁধে দিয়েছেন ওই চালক? প্রথমেই বলেছেন, আপনি গাড়ির মালিক নন। যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন তিনিই গাড়ির মালিক। আসলে ভাড়ার গাড়িতে উঠলেও, অনেকে এই বিলাসিতায় খানিক বাড়তি ঔদ্ধত্য গায়ে চাপিয়ে নেন। সেখান থেকেই চালকের প্রতি অধীনস্থ কর্মীর মতো ব্যবহার করে থাকেন তাঁরা। আর সেই বিষয়টিই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই চালক। সেই সূত্রেই, গাড়ির দরজা আস্তে বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর আরও বক্তব্য, ঔদ্ধত্য নিজের কাছেই রাখুন, কেন-না ঔদ্ধত্য সহ্য করার জন্য আপনি আমাদের বাড়তি টাকা দেবেন না।
এই নির্দেশিকা নিয়েই জোর আলোচনা নেটদুনিয়ায়। কেউ বলছেন, এসব দাবিতে ভুল কিছু নেই। কেউ আবার বলার ধরনে অসন্তুষ্ট। আসলে মুখে যাই বলি না কেন, শ্রেণির ফারাক নিয়ে আমরা অনেকেই কিন্তু কম বেশি সচেতন। রাস্তাঘাটে অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে আচরণেই সেই ভাবনা বোঝা যায় দিব্যি। যেমন ধরুন, বাজারে যিনি সবজি নিয়ে বসেন, কিংবা যিনি রিকশা চালান, তাঁরা ‘আপনি’ সম্বোধন করলেও তাঁদের সঙ্গে ‘তুমি’ করে কথা বলাই যেন দস্তুর, এমনকি তুইতোকারি চালাতেও বাধা নেই। দীর্ঘদিনের চেনাশোনার সুবাদে উভয় পক্ষের ‘তুমি’ সম্বোধনে পৌঁছনোয় একরকম আন্তরিকতা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ‘তুমি’ বলার ক্ষেত্রে তেমন কোনও আন্তরিকতা নেই, বরং আছে অন্যজনকে নিজের থেকে নিচে রাখা। আর ‘তুই’ সম্বোধনের ক্ষেত্রে তো কোনোরকম কৈফিয়তই চলে না। অপরিচিত কোনও মানুষ, নিছক কাজের প্রয়োজনেই যাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাঁকে তুইতোকারি করা যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে দেখা যাবে উলটোদিকের সেই মানুষটি ‘আপনি’, অন্তত ‘তুমি’ সম্বোধনেই কথা বলছেন। ঠিক এই ঘটনাই ঘটে গাড়িচালকদের সঙ্গেও। আসলে নিজের গাড়ি থাকা মানুষকে সামাজিক দৃষ্টিতে খানিক বাড়তি সম্মান এনে দেয়। ফলে ভাড়া করে গাড়ি চড়লেও অনেকসময়ই সওয়ারি নিজেকে সেই উঁচু শ্রেণিতে জুড়ে নেন, চালককে নিজের থেকে নিচুতলার মানুষ মনে করেই কথা বলেন। অথচ এই শ্রেণিবিভাজনের কোনও গুরুত্ব তো আদতে নেই। এই ক্যাবচালকের বক্তব্যের ধরন নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে শ্রেণিবৈষম্যের দিকটিকে যে এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই, এই বক্তব্য সে কথাই মনে করিয়ে দিল নতুন করে।