গাড়িতে বসে হাঁড়ির খবর ফাঁস করায় বিপত্তি। তার জেরেই এক দুই নয়, একেবারে ৮২ লক্ষ টাকা খোয়াতে হল এক মহিলাকে। কিন্তু কেমন করে এই বিপাকে পড়লেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাস্তায় হাঁটছেন, কিংবা যাতায়াত করছেন গাড়িতে। আর তার মধ্যেই ফোনে সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কথাবার্তা, যা হয়তো অন্য সময়ে বলার সুযোগ হবে না। কিন্তু সেই কথা যে অন্যরাও শুনতে পাচ্ছেন, তা খেয়াল করেন না অনেকেই। নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত কথাও একেবারে স্বাভাবিক উঁচু গলাতেই বলে চলেন তাঁরা। ঠিক যেমনটা করেছিলেন এই তরুণী। কিন্তু সেই কাজের জেরে যে এমন বিপাকে পড়তে পারেন, তা বোধহয় তিনি ভাবেনও নি। অথচ বাস্তবে হল তেমনটাই। স্রেফ গাড়িতে বসে ব্যক্তিগত কথা বলার দরুন বিপুল অঙ্কের টাকা খোয়াতে হল তাঁকে।
না, কোনও অনলাইন জালিয়াতির ফাঁদে পড়ে এই টাকা খোয়াননি ওই তরুণী। আসলে ব্ল্যাকমেলের ফাঁদে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। হয়েছিল কি, গাড়ির ভিতর বসেই ফোনে এক বন্ধুকে নিজের জীবনের কিছু সমস্যার কথা বলছিলেন ওই তরুণী। তবে গাড়িটি তাঁর নিজের ছিল না। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ওই তরুণী ইন্দিরানগর থেকে বনসওয়াড়ি যাওয়ার জন্য অনলাইনে একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করেছিলেন। আর সেই গাড়িতে বসেই তিনি বন্ধুকে জানান, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। এমনকি ভাবছেন ডিভোর্সের কথাও। তবে এই কথাগুলি যে এখনও পর্যন্ত তিনি সকলের কাছ থেকেই গোপন রাখতে চান, সে বিষয়েও বন্ধুকে সাবধান করে দেন তরুণী। বরং এই সমস্যার কোনও সুরাহা মেলে কি না, বন্ধুর কাছ থেকে সেই উপায়ই জানতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু গাড়িতে যে তিনি ছাড়াও আরও একজন ব্যক্তি রয়েছেন, অর্থাৎ গাড়ির চালক, সে কথা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি তরুণী। আর বিপদ এসেছে সেখান থেকেই।
আরও শুনুন: নেশা বিকৃত যৌনতার, খুন করে অন্তর্বাস জমিয়ে রাখার শখ সিরিয়াল কিলারের
জানা গিয়েছে, তরুণীর সব কথাই কান পেতে শুনে নিয়েছিল ওই ক্যাব চালক। বছর পঁয়ত্রিশের ওই ব্যক্তির নাম কিরণ কুমার। কিন্তু নিজের পরিচয় গোপন করেই এরপর তরুণীকে ফোন করে সে। নিজেকে তাঁর স্বামীর ছোটবেলার বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। আর বন্ধুত্ব পাতিয়েই তরুণীর সমস্যার সমাধান করার কথা বলে সে। আর এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই তরুণীর কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করতে শুরু করে ওই যুবক। কিন্তু তাকে পালটা প্রশ্ন করতেই সমস্যায় পড়েন ওই তরুণী। তাঁর গোপন কথাগুলি ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখাতে থাকে ওই ক্যাবচালক। তাঁর কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকা নগদ, এবং আরও ৯৬০ গ্রাম সোনার গয়নাও সে হাতিয়ে নেয়, যার দাম ৬০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
যদিও পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবেই টাকা দিয়ে ওই যুবকের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন তরুণী। তবে ধর্মের কল হয়তো সত্যিই বাতাসে নড়ে। হঠাৎ পাওয়া বাড়তি টাকা পেয়ে বিলাসের পথেই হেঁটেছিল যুবক। একদিন রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে সেখানে বসেই বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করছিল সে। তাদের অত্যন্ত দামি মদ খেতে দেখে সন্দেহ হয় এলাকার টহলদার পুলিশের। আর তাঁর প্রশ্ন উত্তরের সূত্রেই ফাঁস হয়ে যায়, কোথা থেকে এত টাকা পেয়েছে ওই যুবক। এরপরেই পুলিশের তরফে যোগাযোগ করা হয় তরুণীর সঙ্গে। ইতিমধ্যেই অভিযুক্তের কাছ থেকে গয়নাগুলি উদ্ধার করে তরুণীকে ফিরিয়েও দিয়েছে পুলিশ। শেষমেশ ব্ল্যাকমেলের ফাঁদ থেকেও রেহাই পেয়েছেন ওই তরুণী।