বোরখা পরে হেঁটে যাচ্ছেন এক মহিলা। আর তাঁর পিঠে রয়েছে জনপ্রিয় এক ফুড ডেলিভারি সংস্থার ব্যাগ। সাধারণত এই ধরনের সংস্থায় যাঁরা ফুড ডেলিভারির কাজ করেন তাঁরা মূলত বাইক বা সাইকেলে চড়েই ডেলিভারি করতে বেরোন। একইসঙ্গে সংস্থার দেওয়া একটি নির্দিষ্ট পোশাকও তাঁদের পরতে হয়। তাই বোরখা পরিহিত এই মহিলার কাঁধে কীভাবে ওই ডেলিভারি সংস্থার ব্যাগ এল, তা নিয়ে বেশ কৌতূহল ছড়িয়েছে নেটদুনিয়ায়। কিন্তু সত্যিই কি খাবার ডেলিভারির কাজেই বেরিয়েছেন মহিলা? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু? আসুন, শুনে নিই।
আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ একটি ছবি। আর সে ছবিই নেটদুনিয়ায় জাগিয়ে তুলেছে কৌতূহল। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, বোরখা পরেই খাবার ডেলিভারি করতে বেরিয়েছেন এক মহিলা। কেননা তাঁর পিঠে আছে জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সংস্থার একটি ব্যাগ। সচরাচর এমন ছবি তেমন দেখা যায় না। তাই বোরখা পরে ফুড ডেলিভারি করতে বেরনো ওই মহিলাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় নেটদুনিয়ায়। আর তার ফলেই জানা যায় নেপথ্যের ঘটনা।
আরও শুনুন: খাবার ডেলিভারি বয়দের লিফট ব্যবহারে মানা, আবাসনের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক
সাধারণত এই সংস্থার ডেলিভারি বয়রা একটি নির্দিষ্ট পোশাক পরেই ডেলিভারি করতে বেরোন। আর এমন ব্যাগ মূলত তাঁদের পিঠেই দেখা যায়। তাই এই বোরখা পড়া মহিলাকে এমন ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যেতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছেন নেটিজেনরা। অনেকেই নিজেদের মতো করে সেই ছবির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ ধরেই নিয়েছেন এই মহিলাও ডেলিভারি করতেই বেরিয়েছেন। তাঁদের মনে হয়েছে, সাইকেল বা বাইক না থেকে তিনি পায়ে হেঁটেই খাবার ডেলিভারি করছেন। তাই তাঁর এই কঠোর পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বেশ কিছু নেট নাগরিক।
তবে আসল ঘটনা খানিকটা অন্যরকম। ওই কথায় আছে না, ‘ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার’! এক্ষেত্রেও কিছুটা সেরকমই হয়েছে। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার কিছুদিন পর বাস্তবে এই মহিলার দেখা পান এক ব্যক্তি। তিনিই মহিলাকে তাঁর ভাইরাল হওয়া ছবি ও অসংখ্য মানুষের শুভেচ্ছাবার্তা দেখান। তারপরই সামনে আসে আসল সত্যি। এসব দেখার পর ওই মহিলা জানান, তিনি আদৌ কোনও খাবার ডেলিভারি সংস্থার কর্মী নন। কাজের সুবিধার জন্য এক পুরনো জিনিসের দোকান থেকে মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে এই ব্যাগটি কিনেছেন। আর কাজের সুবাদে ওই ব্যাগ নিয়েই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয় তাঁকে।
কিন্তু কী এমন কাজ করেন মহিলা, যার জন্য ডেলিভারি সংস্থার ব্যাগ নিয়ে তাঁকে রাস্তায় ঘুরতে হয়?
সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজের জীবন সংগ্রামের গল্প শুনিয়েছেন বছর ৪০-এর রিজওয়ানা। জানা গিয়েছে, লখনউ শহরের জনতা নগর কলোনিতে তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁর বাস। কয়েক বছর আগে অভাবের তাড়নায় তাঁর স্বামী হঠাৎ করে পরিবার ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকেই রোজগারের জন্য পথে নামতে বাধ্য হন রিজওয়ানা। বর্তমানে তিনি সারাদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি দুপুর গড়ালে দৈনন্দিন ব্যবহারের কিছু সামগ্রী বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করেন রিজওয়ানা। তাঁর মতে কেবলমাত্র পরিচারিকার কাজ করে তিন সন্তানের লালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তাই এই বিকল্প রোজগারের পথ বেছে তিনি। এর জন্য প্রতিদিন পাইকারি বাজার থেকে কিছুটা কমদামে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনেন তিনি। তারপর ব্যাগে ভরে সেই জিনিস বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। তাঁর মতে এই কাজের দরুন তাঁকে রোজই প্রায় ২০-২৫ কিমি পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয়।
আরও শুনুন: দুই সন্তানকে বুকে নিয়েই বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি মায়ের, কুর্নিশ নেটদুনিয়ার
আসল ঘটনা যাই হোক না কেন, নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় কিছুটা আর্থিক সুবিধাও হয়েছে রিজওয়ানার। তাঁর এই জীবন সংগ্রামের কাহিনি শোনার পর অনেকেই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে মহিলার একমাত্র লক্ষ্য নিজের সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই তাঁদের পড়াশোনার কোনও খামতি রাখতে চান না তিনি। প্রয়োজনে তাঁকে যত কষ্টই করতে হোক, হাসিমুখেই তা করতে রাজি বলে জানিয়েছেন এই ‘লড়াকু মা’।