একটাই গাছ। কিন্তু তাকে না বলতে পারবেন বেগুনের গাছ, না টম্যাটোর। কেন বলুন তো? আসলে একটা গাছে ফলবে এই দুটোই। অদ্ভুত হলেও বিজ্ঞানীদের দৌলতে সম্ভব হয়েছে এই আশ্চর্য ঘটনা।
এক বৃন্তে দুটি কুসুমের কথা তো আমরা কবিতায় শুনেছি। তা আসলে প্রতীকী। তবে সেই প্রতীক যে কখনও বাস্তবও হয়ে উঠতে পারে, তা একেবারে হাতেকলমে করে দেখালেন বিজ্ঞানীরা। এমন একটা গাছ তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন, যেখানে একই সঙ্গে ফলন হবে বেগুন এবং টম্যাটোর।
নয়া এই প্রজাতির গাছের নাম রাখা হয়েছে ‘ব্রিমাটো’। যেখানে ২ কেজির একটু বেশি টম্যাটোর ফলন হতে পারে। আবার বেগুন ফলতে পারে সাড়ে ৩ কেজি মতো। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার রিসার্চ-এর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ভেজিটেবল রিসার্চ বিভাগের বিজ্ঞানীরা করে ফেলেছেন এই অসাধ্য সাধন। তাঁরা চেষ্টা করছিলেন, এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে, যার মাধ্যমে একই গাছে দুটি সবজি ফলানো যাবে। অবশেষে সেই কাজে সাফল্য লাভ করেছেন তাঁরা। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ডুয়াল গ্রাফটিং’। সহজ করে বলতে গেলে, পদ্ধতিটা হল, একটি গাছের সঙ্গে অন্য গাছের মেলবন্ধন ঘটানো। অবশ্য যদি তারা একই গোত্রের হয় তবেই তা সম্ভব। অর্থাৎ, নারকেল গাছের সঙ্গে বেগুন গাছের গ্রাফটিং করা দুরূহ। কিন্তু বেগুনের সঙ্গে টম্যাটো গাছের মিলন ঘটানোই যায়, এবং বিজ্ঞানীরা সেদিকেই এগিয়েছেন। একটি গাছের নির্দিষ্ট কলা-কোষ অন্য গাছে কাণ্ডে বা মূলে অর্থাৎ শরীরে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এক ধরনের নয়া গাছ তৈরি করা সম্ভব। এমনটাই ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এবং পরীক্ষামূলক ভাবে সেই গাছের জন্ম দিয়ে তাঁরা সাফল্যও পেয়েছেন। বেশ যত্নআত্তি করেই এই গাছ তৈরি করতে হয়েছে। শেষমেশ তাদের খেত-এ ফলনের জন্য লাগানোও সম্ভব হয়েছে।
আরও শুনুন: বিমান থেকে মানুষের মল এসে পড়ল মাথায়, নিজের বাগানেই নাস্তানাবুদ হলেন এক ব্যক্তি
এবার প্রশ্ন হল, এই নয়া গাছে যে টম্যাটো বা বেগুন হচ্ছে, তার স্বাদ কি আলাদা হবে? যেহেতু সব মিলিয়ে গাছটিই নতুন, তাই তার সবজির স্বাদেরও ফারাক আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এই জায়গায় আরও একবার সফল বিজ্ঞানীরা। গাছটি নতুন বটে, এবং তাতে একই সঙ্গে দুটি সবজি পাওয়া যাচ্ছে- তাও ঠিক; কিন্তু মজা হল, এক্ষেত্রে দুটি সবজির যা নিজস্ব স্বাদ তা বজায় থাকছে। কোথাও কিছু পরিবর্তন হচ্ছে না।
আরও শুনুন: নোট বাতিল হয়েছে! জানতেনই না… পুরনো নোটে ৬৫ হাজার টাকা হাতে বিপর্যস্ত বৃদ্ধ
বর্তমান বিশ্বে কৃষিপ্রযুক্তি আমাদের এই অভাবনীয় জিনিস উপহার দিল। শুধু উচ্চ ফলনশীলই নয়, একই গাছে দুরকম সবজির ফলন যদি ব্যাপক হারে হতে তা থাকে, তাতে আমাদের সমাজও উপকৃত হবে ভীষণ হবে। আর তাই চমক্রপ্রদ এই আবিষ্কারের জন্য কৃষিবিজ্ঞানীদের কুর্নিশ জানাচ্ছেন আপনার আমার মতোই অসংখ্য সাধারণ মানুষ।