চটুল গানের সংলাপে একসময় শোনা যেত মেলা থেকে বউ এনে দেওয়ার আবদার। কিন্তু সত্যিই যে মেলায় গেলে বউ মেলে, সে কথা জানেন কি? আসুন, তবে শুনে নেওয়া যাক এই অদ্ভুত হাটের কথা।
মেলায় রকমারি জিনিসপত্র কেনাবেচা হবে, সে আর নতুন কথা কী! কিন্তু এ এক এমন হাট, যেখানে বউ কিনতে পাওয়া যায়। আজ্ঞে হ্যাঁ, বিয়ে করার জন্য মেয়ে কিনতেই এই হাটে ঢুঁ মারেন মানুষজন। যে কোনও ব্যবসায়িক পণ্যের মতো মেয়েদের দাঁড় করিয়ে রীতিমতো দর হাঁকা হয় এখানে। চলে দরাদরিও। তারপর পছন্দসই মেয়েটিকে দখল করে বাড়ির দিকে পা বাড়ান ক্রেতা অর্থাৎ মেয়েটির হবু স্বামী, আর মোটা টাকা পকেটে ভরে বাড়ি ফেরেন বিক্রেতা তথা মেয়েটির বাবা-মা। কি, চমকে গেলেন? হ্যাঁ, কোনও দালাল নয়, খোদ পরিবার থেকেই হাতবদল হয় এই মেয়েদের। চুরি করা আনা কিংবা পাচার করে দেওয়া মেয়ে, কিংবা যৌনদাসী ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার নয় এটি। এখানে সরাসরি বাবা-মাই বিক্রি করে দেন মেয়েকে। আর এহেন কাজের পিছনে থাকে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার তাগিদ। ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: এখানে এলে সম্পর্ক নাকি আর ভাঙেই না! প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভরসা জোগায় এই পার্ক
‘ব্রাইড মার্কেট’, অর্থাৎ বউ বিক্রির মেলা আয়োজন করে থাকে ইউরোপের একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী। বুলগেরিয়ার রোমা বা কালাইদঝি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এই মানুষেরা নিজেদের পুরনো রীতিনীতি আঁকড়ে থাকতেই ভালবাসে। আর সেই কারণেই নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে অন্য কাউকে বিয়ে করার নিয়ম নেই এদের মধ্যে। এদিকে মেয়েদের প্রায় পর্দানশিন করে রাখে এরা। অবিবাহিত পুরুষ ও মেয়েদের মধ্যে কোনোরকম দেখাশোনার পরিসরও থাকে না। কিন্তু তাহলে কীভাবে নিজেদের জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবে এই গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা? সেই কারণেই এরা আয়োজন করে ‘ব্রাইড মার্কেট’-এর। কেবল কুমারী মেয়েদের নিয়েই বাণিজ্য চলে এই মেলায়। তবে যে কোনও মেয়ে নয়। এই বাজারে পণ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে কেবল সেই মেয়েরাই, যারা এখনও অক্ষতযোনি। কৌমার্য হারালে আর মেলায় বিক্রি হওয়ার সুযোগ পায় না কোনও মেয়ে।
আরও শুনুন: মমতাজের সমাধি ছিলই না আগ্রায়, তবে কেন তাজমহল গড়েছিলেন শাহজাহান?
হ্যাঁ, বাস্তবিকই এই মেলা থেকে বউ খরিদ করে বাড়ি ফেরেন পুরুষেরা। মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখে শুনে, সমবেত নৃত্যে অংশ নিয়ে মেয়েদের খানিক যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ পান তাঁরা। এরপর মেয়েদের মঞ্চে তুলে নিলামের মতো দর হাঁকা হয়। তাদের দাম মূলত নির্ধারিত হয় ‘ব্লাড ফর দ্য ফাদার’ এই আশ্বাসের উপরে। অর্থাৎ মেয়ের বাবা নিশ্চিতভাবে জানান যে তাঁর মেয়ে এখনও কুমারী, মেয়েটির কৌমার্য হরণ করার অধিকার বর্তাবে একমাত্র তার স্বামীর উপরেই। সুতরাং সন্তানের পিতৃত্ব সম্পর্কে পুরুষটি নিশ্চিত হতে পারে। তারপর মেয়েটির দাম নিয়ে দরাদরি চলে উভয় পক্ষের মধ্যে। সর্বনিম্ন সাত হাজার ডলার থেকে শুরু করে বিশ হাজার ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে কোনও মেয়ের দাম। তবে মেয়েটির দাম যতই হোক, এই সবকিছুর মধ্যে মেয়েটির মতামতের কোনও দাম যে থাকে না, সে কথা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তবে ক্রমশ এই অমানবিক নিয়মের কড়াকড়ি শিথিল হয়ে আসছে, এটুকুই যা আশার কথা।