“সোনার আংটি আবার ব্যাঁকা!” একটা সময় পর্যন্ত বিয়ের বাজারে ছেলেদের ক্ষেত্রে এই কথাটি ছিল ধরাবাঁধা। কিন্তু সেই যুগ যে ফুরিয়েছে, তা বারবার প্রমাণ করে দিয়েছেন মেয়েরা। ছেলে মানেই ‘সোনার আংটি’ সেই ধারণাকেই ভেঙেচুরে দিয়েছেন তাঁরা। এই মেয়েটির কথাই ধরুন না? বিয়ের মন্ডপে দাঁড়িয়ে নিজেই খারিজ করে দিয়েছেন পাত্রকে। ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন বরমাল্য। আর সেই ভিডিওই সম্প্রতি দারুণ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঠিক কী কারণে বিয়ে বাতিল করলেন তিনি? আসুন, শোনা যাক।
বিয়ের বাজারে ছেলে যেমনই হোক তাঁর দাম নাকি প্রচুর। এই প্রচলিত ধারণা এখনও চলে আসছে বহু জায়গাতেই। বিয়ের পর কোনও রকম সমস্যা হলে মেয়েটিকেই উল্টে মানিয়ে নিতে বলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। এসবের মধ্যিখানে পড়ে আজও বহু সময়ই গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে হয় বহু মেয়েকে। প্রাণ যাওয়ার ঘটনাও খুব বিরল নয়। শুধু গ্রামগঞ্জে নয়, এখনও বহু তথাকথিত উন্নত পরিবারেও এই দৃশ্যের দেখা মেলে।
তবে জোর করে মানিয়ে নেওয়া বা কোনও রকম সমঝোতার ধারপাশ মাড়াননি এই কনে। বরং একগুচ্ছ লোকের সামনেই সে বুক ঠুকে জানিয়ে দিয়েছে নিজের দাবিদাওয়ার কথা। না, লোকের কথা বা পরিবারের লজ্জার ভয়, কোনও কিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে।
আরও শুনুন: প্রথম প্রযোজনা সংস্থা শুরু থেকে প্রথম সিনেমা পরিচালনা! স্পর্ধার অন্য নাম ফতিমা বেগম
নিজে সে যথেষ্ট শিক্ষিত। কলেজের কোঠা পার করে বি.এড পড়ছে সে। এসবে মধ্যেই তাঁর বিয়ের আয়োজন করে ফেলেছিল পরিবার। তবে বিয়ের মণ্ডপে উঠে সে জানতে পারে, পড়াশোনা জানা তো দূরের কথা, সইটুকু পর্যন্ত করতে পারে না পাত্র। সইসাবুদের প্রয়োজন হলে টিপছাপ দিতে হয় তাঁকে। আর তা জানতে পেরেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় সেই কনে।
কোনও অশিক্ষিত ব্যক্তির সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে পারবে না সে। বিয়ের মণ্ডপেই সে কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন সেই কনে। ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন বরমাল্যও। ইংরেজিতে সড়গড় কোনও ছেলের গলাতেই তিনি মালা দেবেন বলেই সাফ জানিয়েছেন। বিয়েবাড়ির ভিড়ের মধ্যে থেকেই জনৈক ব্যক্তি গোটা ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন। আর সেই ক্লিপই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আরও শুনুন: বিয়ের জন্য ইতি পড়াশোনায়, পড়ার অভ্যাস বাঁচিয়ে রাখতে ২৫ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন সেই সঞ্জনা
ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ কেউ সেদিন মেয়েটিকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টাও করেন। অশিক্ষিত ছেলেকে যে তিনি বিয়ে করতে রাজি নন, এ কথা কি আগে জানাতে পারেতেন না কনে? এই প্রশ্নেরও সপাটে জবাব দিয়েছেন কনে। জানিয়েছেন, তিনি আদৌ এই বিয়ে করতে চাননি। অর্থের লোভেই ছেলেটির সঙ্গে তাঁর জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন সরাসরি।
বহু ক্ষেত্রেই পরিবারের চাপের মুখে অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য হন বহু মেয়ে। বাকি জীবনটা সমঝোতা করেই কাটিয়ে দেন অনেকে। তবে এই মেয়ে যে মোটেও সেই দলে পড়েন না, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ভাল ভাবেই। সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি যে ভাবে নিজের কথা জানানোর সাহস রেখেছেন, বিয়ে ভাঙার হিম্মত দেখিয়েছেন, তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটদুনিয়ার অনেকেই।