আধুনিক মায়েদের একাংশ স্তন্যপান করাতে নিমরাজি। আদৌ কি কোনো ক্ষতি হতে পারে এর ফলে? আসুন শুনে নিই।
স্তন। শুনতে একটিমাত্র শব্দ। কিন্তু তাকে ঘিরে কতই না ফিসফাস, চোরাগোপ্তা ঈশারা জুড়ে আছে! একটি মেয়ের বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু করে, যৌবন। সদ্য মাতৃত্বের অনুভূতি, এমনকী মধ্যবয়সেও স্তন নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের মনে! শুধু কি কৌতূহল? স্তনের গড়ন ধরণ নিয়ে হাসি-ঠাট্টার চটুল রসিকতা প্রায়ই আমাদের কানে আসে। নারী শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও একে নিয়ে লুকোচুরির অন্ত নেই। পাশাপাশি আছে তাঁদের যথাসাধ্য ঢেকেঢুকে রাখার চেষ্টা। কোনোমতেই যেন কারও চোখে না পড়ে নারীর শরীরের এই অঙ্গটি। তাই গুরুত্ব যাই হোক না কেন, স্তন নিয়ে ট্যাবুর বাড়বাড়ন্ত কিন্তু রয়েই গেছে। আর সেই ট্যাবু ভাঙতেই এবার সোচ্চার হয়েছেন আমেরিকার এক নারী। কোনোরকম বিধিনিষেধের তোয়াক্কা ছাড়াই তিনি নাকি বিলিয়ে দিচ্ছেন কয়েকশো লিটার স্তন্যদুগ্ধ!
এখনও অবধি তিনি ২৬৪৫.৫৮ লিটার স্তনদুগ্ধ দান করেছেন। শুধু তাই নয়, এই কাজটি করে তাঁর নামটি তিনি এতদিনে তুলে ফেলেছেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায়। তরুণীর নাম অ্যালিস অগ্লেট্রি। বাড়ি তাঁর টেক্সাসে। বয়স তিরিশের কোঠা পেরিয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, অ্যালিস তার বুকের দুধ দান করেছিলেন টেক্সাসের উত্তরে, মাদারস মিল্ক ব্যাঙ্কে। সেই মিল্ক ব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১১টি প্রি-ম্যাচিওরড বেবি এক লিটার বুকের দুধে বেঁচে থাকতে পারে। সেই শুরু। আর থেমে থাকেননি। মাদারস মিল্ক ব্যাঙ্কের তালিকা অনুযায়ী এখনও অবধি প্রায় ৩৫০,০০০ নবজাতক অ্যালিসের বুকের দুধ খেয়ে বাঁচতে পেরেছে।
সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দ্বারা এই বিষয়টি সকলের নজরে আসে। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর স্তন্যদুগ্ধ দানের আগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন তাঁদের প্রথম সন্তান, কাইল যখন হাসপাতালে ছিল, তখন কাইলের সঙ্গে তিনিও হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। কাইল তাঁর দুধ খেতে পারছিল না। আর দুধের ভারে তাঁর বুক ভারী হয়ে উঠেছিল। ঠিক তখনই নার্সদের কথায় বুকের দুধ বের করে হাসপাতালের ফ্রিজে রাখতে শুরু করেছিলেন। ব্যস সেই থেকেই এ কাজের শুরু। তাঁর মতে পৃথিবীর সেরা অনুভূতিগুলির মধ্যে এটি একটি। অ্যালিস অন্যান্য মা এবং তাদের শিশুদেরও সাহায্য করতে চান। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য মহিলাদেরও স্তনদুগ্ধ দান করার বিষয়ে সচেতন করতে চান৷
আরও শুনুন: শুধু সদ্যোজাত নয়, বড়দেরও চাই স্তন্যদুগ্ধ! নতুন ট্রেন্ডের নেপথ্যে কারণ কী?
এমনিতেই, মায়ের দুধকে সদ্যোজাতর জন্য প্রথম ভ্যাকসিন বলা যায় অনায়াসে। বিশেষ করে শিশু জন্ম নেওয়ার পর হবার কিছুক্ষণ পর মায়ের বুক থেকে যে হালকা হলদেটে দুধ নিঃসৃত হয়, একে বলে কোলোস্ট্রাম। এই দুধ প্রোটিনে এবং অ্যান্টিবডিতে ভরপূর। আর ঠিক এই কারণেই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতি বছর ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড ব্রেস্ট ফিডিং উইক। এ কথা ভুললে চলবে না যে, শিশুর পুষ্টির দিক থেকে মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই। শারীরিক কারণে অনেক মা সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্তন্য দিতে পারেন না, আবার মা-হারা বহু শিশুও তো মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাঙ্ক সেই শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে পারে। আর সেই কারণেই স্তনদুগ্ধ দানের বিষয়ে সচেতনতা থাকাও প্রয়োজন। ছকভাঙা কাজের সেই বার্তাই দিচ্ছেন এই তরুণী।