দাম্পত্যের বয়স ৮৪। এতদিন এক ছাদের তলায় কাটিয়েছেন দুজনে। আগামীতেও একইসঙ্গে থাকতে চান। তবে সংসারে সদস্য সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বহুদিন। বটগাছের মতো তাঁদের আগলে বাঁচেন দুজনে। কাদের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সে বেশ পুরনো দিনের কথা। ব্রাজিল তখনও বিশ্বকাপ জেতেনি, একবারও। মোবাইল, টিভি দূরের কথা, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতও ছিল বেশ কঠিন। আজকের দুনিয়ার সঙ্গে মিল নেই প্রায় কিছুরই। স্রেফ একটা জিনিস ছাড়া।
কথা বলছি, ভালোবাসার। নিখাদ, স্বচ্ছ, স্বাভাবিক ভালোবাসা। তাতে কোনও ভুল নেই, কোনও জড়তা নেই, কারচুপি নেই এতটুকু। আর সেই ভালোবাসার জোরেই একটানা ৮৪ বছর একসঙ্গে কাটিয়ে ফেলেছেন দম্পতি। দুজনেরই বয়স ৯০-র ঘরে। কিংবা তার চেয়েও বেশি। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই এতটুকু। ভালোবেসে একে অপরের দিকে চেয়ে, এখনও দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফেলতে পারেন এঁরা। কোনও ভনিতা নেই এঁদের ভালোবাসায়। আছে বলতে শুধু প্রেম, নিখাদ প্রেম।
তবে এতদিনের যাত্রাপথ সহজ ছিল না মোটেও। কথা প্রসঙ্গে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণায় বৃদ্ধ জানান, সম্পর্কের শুরুর দিন থেকে নানা প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে তাঁদের। বাড়ির অমতে বিয়ে, কোনওক্রমে সংসার চালানো, সবই দুজন হাতে হাত রেখে পার করেছেন। ১৩ সন্তানকে মানুষ করাও কঠিন ছিল। তবু হার মানেননি। ছেড়ে যাওয়ার কথাও ভাবেননি। সন্তানরা বড় হয়েছে। তাঁদেরও পরিবার হয়েছে। সব মিলিয়ে নাতি নাতনির সংখ্যা ছিল ৫৪ জন। বর্তমানে তাঁরাও অনেকেই সংসার পেতেছেন। সন্তান এসেছে তাঁদের ঘরেও। সেই খুদেদের নিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংসারের সদস্য সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। এতবড় পরিবার স্বাভাবিকভাবেই বিরল। তবে তার চেয়েও বিরল এঁদের দাম্পত্যের বয়স। ৮৪ বছর বেঁচেই থাকেন না অনেকে। সেখানে এঁরা সংসার করছেন এতগুলো বছর ধরে। এই কদিনে পৃথিবী অনেক বদলেছে। ভালোবাসার সমীকরণ, ভালোবাসার ধরণ, সবই বদলেছে। স্রেফ এক হয়ে থেকে গিয়েছেন এই দম্পতি। কেউ ছিঁড়তে পারেনি তাঁদের সম্পর্কের বাঁধন। গিনেস বুক বিশ্ব রেকর্ডের তরফেও এঁদের সম্পর্কে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরাও বেজায় খুশি হয়েছেন তাতে। বিশেষ করে একেবারে তরুণ প্রজন্মের যারা, অর্থাৎ ওই দম্পতির নাতির ছেলে মেয়ে, তাঁরাও শিক্ষা নেয় এঁদের ভালোবাসা দেখে।