বাড়ির নাম ‘আশীর্বাদ’। কিন্তু আসলে তা যেন অভিশাপের ‘আঁতুড় ঘর’। এই বাড়ি কেনার পর দেউলিয়া হয়েছেন অনেকেই। তালিকায় নামজাদা তারকারাও রয়েছেন। ঠিক কোথায় রয়েছে এমন অভিশপ্ত বাড়ি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
স্বপ্ননগরী মুম্বই। অভিনেতা হওয়ার আশায় কতজন যে এখনও এই শহরে পা রাখেন তা হিসেব রাখা কঠিন। আর এই ধারা চলে আসছে কয়েক দশক ধরেই। শাহরুখ-অমিতাভ থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব গায়ক গায়িকার স্থায়ী ঠিকানা এই শহর। প্রত্যেকেরই রয়েছে প্রাসাদসম বাড়ি। অনেকে স্রেফ তারকাদের সেই বাড়ি দেখার উদ্দেশ্য নিয়েই শিল্প নগরীতে হাজির হন। তবে সব বাড়িই যে সেই কারণে বিখ্যাত তা নয়। কিছু বাড়ি বিখ্যাত হয়েছে তার অভিশাপের কারণে।
আরও শুনুন: সংবিধানের খসড়া করেছিল হিন্দু মহাসভাও, সেখানে কি জায়গা ছিল মুসলিমদের?
ঠিক কিরকম? তাহলে খুলেই বলা যাক।
মুম্বইয়ের বেশ কিছু এলাকা নামীদামি তারকার বাড়ি থাকার কারণে বিখ্যাত। তেমনই এক জায়গা হল কার্টার রোড। একসময় এখানে দেশের অধিকাংশ নামজাদা তারকার বাড়ি ছিল। সব মিলিয়ে এই এলাকাই ছিল শিল্প নগরীর সবথেকে জমজমাট অংশ। শোনা যায়, মুম্বই ফিল্ম সিটি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলে দুটি প্রাসাদের মতো বাড়ি ছিল। একটি আশিয়ানা, অন্যটি আশীর্বাদ। প্রাচীন হওয়ার কারণেই দুটি বাড়ি এখনও অনেকের কাছে দর্শনীয়। তবে সেইসঙ্গে আশীর্বাদ নামের বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অভিশাপের কাহিনী। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এ বাড়ি কেনার পর থেকে জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছে বহু তারকার। তবে তা একেবারেই শুভ পরিবর্তন নয়। ছবি ফল্প থেকে শুরু করে ঋণের বোঝা, তারকাদের কতই না সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে এই বাড়ি কেনার দরুন। শোনা যায়, প্রথমে এই বাড়ি ছিল কোনও এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ব্যক্তির। ৫০-এর দশকে এই বাড়িটি কেনেন তৎকালীন সুপারহিরো ভারত ভূষণ। প্রথমদিকে কোনও অসুবিধা ছিল না। তাঁর অভিনীত একের পর এক ছবি হিট হতে থাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সবটা বদলে যায়। প্রথমে ছবি ফল্প, তারপর ঋণের বোঝা। সবমিলিয়ে কার্যত দেউলিয়া হয়ে যান ভারত ভূষণ। কিছুদিনের মধ্যেই সিনেপাড়া থেকে উধাও হয়ে যায় তাঁর নাম। তারপরই ছড়িয়ে পড়ে এই বাড়ির অভিশাপের কথা। অনেকেই বুতে শুরু করেন, ভারত ভূষণের জীবনের এই ঘটনার জন্য দায়ী ওই বাড়ি। তাই এত সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন এই বাড়ি ফাঁকাই পড়ে ছিল। কেউই সাহস করে বাড়ি কেনার কথা ভাবতেন না। স্বাভাবিকভাবেই বাড়িটির দামও কমতে শুরু করে। আর এই সুযোগে বাড়িটি মাত্র ৬০ হাজার টাকায় কিনে ফেলেন রাজেন্দ্র কুমার। ভারত ভূষনের পর তিনিও রীতিমতো জনপ্রিয় ছিলেন ভারতীয় সিনেমায়। তবে এই বাড়ি কিনে বদলে যায় তাঁর জীবনের কাহিনীও। একের পর এক হিট ছবি করা নায়ককে হঠাতই কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেন নির্মাতারা। নেপথ্যে অবশ্য বেশ কিছু কারণ ছিল, কিন্তু রটে যায় ওই বাড়ি কেনার জন্যই এমনটা হয়েছিল রাজেন্দ্রর সঙ্গে।
আরও শুনুন: প্রদর্শনীর দোরগোড়ায় দুই নগ্ন মডেল, স্পর্শ করেই ঢুকতে হবে দর্শকদের
এখানেই শেষ নয়। ৭০-র দশকে এই বাড়িটি কেনেন জনপ্রিয় অভিনেতা রাজেশ খান্না। কেনার পর অবশ্য তাঁর জীবনেও এসেছিল পরিবর্তন। প্রথম দিকে তাঁর ছবিও বক্স অফিসে হিট করতে শুরু করে। কিন্তু বেশিদিনের জন্য নয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁর জায়গা দখল করে নেন বলিউডের বাদশা অমিতাভ বচ্চন। আর ঘটনার জন্যেও ওই বাড়িটিকেই দায়ী করা হয়। বর্তমানে অবশ্য বাড়িটি আর নেই। বহু হাত ঘুরে এই বাড়ির মালিক হন এক শিল্পপতি। অভিশাপের কথা শুনে তিনি আর কোনও রকমের ঝুঁকি নেননি। বাড়িটি ভেঙে একেবারে নতুন করে তৈরি করেছেন। এখন সেখানে গেলে আরও বড় এক প্রাসাদের দেখা মেলে। তবে এই বাড়ি ঘিরে থাকা জনশ্রুতি এখনও হারিয়ে যায়নি। অনেকেই সেই গল্প শুনে নতুন বাড়িটিকেই দেখতে আসেন।