বিয়েবাড়ি যেমন প্রীতিভোজ ছাড়া অসম্পূর্ণ, মন্দিরে পুজোও তেমন প্রসাদ না পেলে অসম্পূর্ণ। কিন্তু বিয়েবাড়ির মেনুতে যে খাবার থাকে তা কি কখনও মন্দিরের প্রসাদে থাকতে পারে? ভাবতে অবাক লাগলেও আমাদের দেশের একটি মন্দিরে কিন্তু তেমনটাই হয়। সেখানে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় বিরিয়ানি। তাও আবার নিরামিষ নয়। মটন কিংবা চিকেন বিরিয়ানিই হল এই মন্দিরের প্রসাদ। কোথায় আছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দির মানেই পবিত্র স্থান। তাই সেখানে কোনও রকম আমিষ দ্রব্য একেবারেই নিষিদ্ধ। ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মন্দিরেই দেবতার উদ্দেশে যে ভোগ দেওয়া হয়, তার সিংহভাগই হয় নিরামিষ পদ। কিছু শাক্ত মন্দিরে বলি প্রথার প্রচলন থাকলেও, সেই বলির মাংস বিশেষ ভাবে রান্না করা হয়। পিঁয়াজ রসুন ছাড়া এই মাংসের পদ ‘নিরামিষ’ হিসেবেই দেবীকে অর্পণ করা হয়। তবে দক্ষিণ ভারতের এই মন্দিরে সেসব বালাই নেই। প্রসাদ হিসেবে এখানে পাওয়া যায় সুস্বাদু মটন কিংবা চিকেন বিরিয়ানি।
তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের এই মন্দিরে প্রতি বছর এক বিশেষ উৎসব হয়। জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মন্দির চত্বরে বসে মেলা। শুধুমাত্র দর্শনার্থী নয়, এই চত্বরে যাঁরা আসেন তাঁদের সবাইকেই প্রসাদ হিসেবে বিরিয়ানি দেওয়া হয়। মন্দিরের আরাধ্য মুনিয়ান্দি স্বামী। গত ৮৩ বছর ধরে তাঁর মন্দিরে এই বিরিয়ানি উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই উৎসবের সময় স্থানীয়রা একইসঙ্গে শিব ও শক্তির পূজাও করে থাকেন। এমন উৎসবের মাধ্যমে পারস্পরিক বন্ধুত্ব বৃদ্ধি হয় বলেই মনে করেন তাঁরা। তবে বাস্তবে এই রীতির পিছনে রয়েছে এক কাহিনি।
শোনা যায়, এই গ্রামের এক ব্যক্তি হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। মুনিয়ান্দি স্বামীর মন্দিরে পুজো দিয়ে ব্যবসা শুরু করার পর ব্যাপক সাফল্য পান তিনি। রমরমিয়ে চলে তাঁর ব্যবসা। সেই থেকেই মন্দিরের বিগ্রহকে উৎসর্গ করে এই মহাভোজের আয়োজন করেন তিনি। পরবর্তী কালে যা উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনকী বর্তমানে সেই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই হোটেল ব্যবসাকে নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। স্থানীয় ভাষায় এঁদের হোটেল গুলিকে মুনিয়ান্দি হোটেল বলেন সবাই। উৎসবের দিনগুলিতে ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় বিরিয়ানি বিতরণ। আগত দর্শনার্থীরাও নিজেদের সাধ্যমতো অনুদান দেন। তবে কারও কাছেই জোর করে কিছু চাওয়া হয় না। স্থানীয়রা মনে করেন, মন্দিরের আরাধ্য স্বয়ং একজন বিরিয়ানিপ্রেমী। তাই প্রতি বছর লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ এই মন্দিরে ছুটে আসেন। প্রসাদ হিসাবে পান বিরিয়ানি। এমন প্রসাদের কারণেই সারা দেশে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে এই মন্দির।