শুধুমাত্র ভারতের কোহিনূর হিরে নয়। অন্যান্য উপনিবেশ থেকেও বিভিন্ন বহুমূল্য জিনিস লুঠ করেছিল ব্রিটিশরা। রানির মৃত্যুর পর সেইসব বস্তু যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। কী কী আছে সেই বহুমূল্য বস্তুর তালিকায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
উপনিবেশ থাকার সময়েই এ দেশ থেকে সরাসরি রানির দেশ অর্থাৎ ব্রিটেনে পাচার হয়ে গিয়েছিল বহুমূল্য কোহিনূর হিরে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুকুটেও সেই বহুমূল্য হিরেটিকে শোভা পেতে দেখা গিয়েছে। তবে শুধুমাত্র কোহিনূর নয়। অন্যান্য উপনিবেশ থেকে নিয়ে আসা, আরও কিছু চোখধাঁধানো রত্ন রয়েছে ব্রিটেনের সংগ্রহে। রানির মৃত্যুর পর কোহিনূর প্রসঙ্গের পাশাপাশি উঠে এসেছে সেইসব লুঠ করা রত্নের কথাও।
আরও শুনুন: ‘ধর্মীয় আচারে’র নামে নিয়মিত ধর্ষণ নাবালিকাকে, অবশেষে গ্রেপ্তার স্বঘোষিত ‘ঈশ্বরের অবতার’
তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আফ্রিকা থেকে নিয়ে যাওয়া হিরে, গ্রেট স্টার অফ আফ্রিকা। বলা হয় এই হিরেটিই নাকি পৃথিবীর সবথেকে বড় হিরে। প্রায় ৫৩০ ক্যারাটের এই হিরেটির বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। ১৯০৫ সালে আফ্রিকার এক খনি থেকে আবিষ্কার করা হয়েছিল এই হিরে। ইতিহাসবিদদের মতে, হিরেটি তৎকালীন ব্রিটিস প্রশাসনিক সপ্তম এডওয়ার্ড-কে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। তবে তা লুঠ করা হয়েছিল কি না তার কোনও সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এরপরেই বলতে হয় টিপু সুলতানের একটি আংটির কথা। জীবদ্দশায় এই ভারতীয় সুলতানের আঙুলে সবসময় থাকত একটি রত্নখচিত আংটি। যার উপর দেবনাগরী অক্ষরে লেখা ছিল ‘রাম’। ১৭৯৯ সালে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারান তিনি। শোনা যায় সেদিন টিপু সুলতানের মৃতদেহ থেকেই খুলে নেওয়া হয়েছিল সেই আংটি। পরে যা বিভিন্ন হাত ঘুরে ব্রিটেনে গিয়ে পৌঁছায়। এমনকি ২০১৪ সালে হওয়া এক নিলামে সেই আংটির দাম ঠিক হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরপরেও নাকি লন্ডনের এক নিলামে আগের তুলনায় দশগুণ বেশি দামে বিক্রি হয় সেই আংটি।
তালিকার পরবর্তী বস্তুটি এলগিন মার্বেল। অনেকেই যাকে পার্থেনন মার্বেল হিসেবে চেনেন। এই মার্বেল দিয়েই গ্রিস দেশের বিখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছিলেন অসাধারণ কিছু মূর্তি। গ্রিসে তৈরি হওয়া সেইসব মূর্তি আজও শিল্পকলার নিদর্শন হিসেবে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়। মনে করা হয় ১৮০৩ সালে এই বিশ্ববিখ্যাত মূর্তিগুলি গ্রিস থেকে চুরি করে লন্ডন মিউজিয়ামে নিয়ে আসা হয়। তারপর ১৯২৫ সাল থেকে বারংবার ব্রিটিশ সরকারের কাছে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে গ্রিস। কিন্তু বহুবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সেগুলি ফেরত পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
আরও শুনুন: ধর্মের বাধা সরাল বিপর্যয়, বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তানে মুসলিম পরিবারগুলিকে আশ্রয় দিচ্ছে মন্দির
এরপর অবশ্যই বলতে হয় রোসেটা স্টোনের কথা। ১৮০০ সালে মিশর থেকে যা লুঠ করা হয়েছিল। বলাই বাহুল্য এই পাথরেরও বিশেষ কিছু ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অন্যান্য বস্তুগুলির মতো এটিকেও মিউজিয়াম থেকে বার করতে নারাজ ব্রিটিশ সরকার।
এ তালিকা এখানেই শেষ হওয়ার নয়। আরও বিভিন্ন বহুমূল্য সামগ্রী ভরে রয়েছে ব্রিটিনের সংগ্রহশালায়, যার বেশিরভাগই অনৈতিক ভাবে লুঠ করা। তবে ব্রিটেনের দাবি, সে দেশের মিউজিয়াম এত বছর ধরে সারা বিশ্বের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। আর সেই পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রাখতেই এইসব বহুমূল্য ঐতিহাসিক বস্তুর কোনোটিকেই ফেরত দিতে নারাজ রানির দেশ।