স্নান করেন মাত্র ৩ মগ জলে। ঘর পরিষ্কার করার কাজেও সেই জলই আবার ব্যবহার করেন। একইভাবে গাছে জল দেওয়া বা অন্যান্য কাজেও একই জল বারবার ব্যবহার করেব বেঙ্গালুরুর এই বাসিন্দা। তবে জলের অভাব বলে নয়, বেঙ্গালুরুর জল সংকট তৈরি হওয়ার বহু আগে থেকেই এমনটা করে আসছেন তিনি। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অপ্রয়োজনে জল নষ্ট করবেন না! বিজ্ঞাপনের এই লাইন সকলেরই চেনা। কিন্তু তা মানেন কজন? সাধারণ অভ্যাসের জেরেই প্রতিদিন যে পরিমাণ জল নষ্ট হয়, তা অনেকেরই ভাবনার বাইরে। বারবার প্রচার করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয় না বললেই চলে। তার প্রভাবও চোখে পড়ছে ভালমতোই। বিগত কয়েকমাস ধরে জল যন্ত্রণায় জর্জরিত বেঙ্গালুরু। দৈনন্দিনের পানীয় জল পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন সেখানকার মানুষ। আগামীদিনে এই সমস্যায় পড়তে পারেন দেশের অন্যান্য প্রান্তের অনেকেই। যদি না এখনই সবাই সতর্ক হন।
আরও শুনুন: বেঙ্গালুরুর জল সমস্যা কি আমাদেরও কিছু শেখাবে?
এক্ষত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে ঠিক কীভাবে জল সংরক্ষণ করা হবে?
বইয়ে লেখা সংরক্ষণ পদ্ধতি অনেক সময় বাস্তবে কাজে লাগানো কঠিন হয়। তাই বাস্তবে জল সংরক্ষণ করছেন এমন কারও উদাহরণ আলোচনা করা যেতে পারে। আর সেখানেই উঠে আসে ওদেতে কাতরাক-এর নাম। তিনিও বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। বয়স ৬০-র ঘরে। তাঁর জীবনের ধ্যান জ্ঞান বলতে পরিবেশ রক্ষা। বলা ভালো, জল সংরক্ষণ। যদিও প্রথম থেকেই যে এ ব্যাপারে ওদেতে সচেতন ছিলেন তা নয়। ২০০৯ সালে একটা ভিডিও দেখে তাঁর টনক নড়ে। সেখানে দেখানো হয়েছিল, জল শূণ্য পৃথিবী ঠিক কেমন দেখতে হবে! সারাদিন মাত্র ১ গ্লাস পানীয় জল, স্নান বা অন্য কোনও কাজ করতে হচ্ছে জল ছাড়া, এসব শিহরিত করেছিল ওদেতে-কে। তারপর থেকেই ঠিক করেন জল সংরক্ষণ করবেন। একদিনে সম্ভব হয়নি সবটা। ধীরে ধীরে নিজের মতো করে জল সংরক্ষণের উপায় বাতলেছেন তিনি। বর্তমানে নিজের বানানো জল সংরক্ষণ পদ্ধতি সকলকে শিখিয়েও বেড়ান ওদেতে। সে প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে জেনে নেওয়া যাক, ওদেতে নিজে কীভাবে দিন কাটান!
আরও শুনুন: ‘মরলে হবে চাতক পাখি’, জলের সংকট আর সংরক্ষণের কথা বলে বাংলা প্রবাদও
একেবারে সাধারণ জীবনযাপন। সেখানে জলের ব্যবহারও রয়েছে যথেষ্টই। কিন্তু বেশিরভাগটাই পুরনো জল ব্যবহার করা। মানে স্নান করা, মুখ ধোওয়া এবং খাওয়া ছাড়া ফ্রেস ওয়াটার ব্যবহার করেন না ওদেতে। তাই যে জলে স্নান করেন সেটাই ব্যবহার করেন অন্য কোনও কাজে। তাঁর মতে বাড়ির যেসব কাজে জল প্রয়োজন তা ভাগ করলেই দেখা যাবে, সর্বত্র ফ্রেস ওয়াটার প্রয়োজন নেই। সেই ফর্মুলা মেনেই দিন কাটান তিনি। স্নান করেন মাত্র ৩ মগ জলে। এর জন্য বন্ধুমহলে কটাক্ষও শুনতে হয়েছে। কিন্তু ওদেতে নিজের অভ্যাস বদলাননি। শাওয়ারের মায়া ত্যাগ করেছেন চিরতরে। এছাড়া ঘর মোছার জন্য তিনি ব্যবহার করেন নিজের তৈরি করা ভেষজ ক্লিনার। যা জলে মিশলেও জলকে বিষাক্ত করে না। কাজেই ঘর মোছার জলই তিনি গাছের জন্য ব্যবহার করেন। একইভাবে বাসন মাজার জল বাথরুম পরিষ্কার বা ফ্লাস করার কাজে ব্যবহার করেন। আর এভাবেই প্রতিদিন কয়েকশো লিটার জল সংরক্ষিত হয়। বাকিদেরও একই পরামর্শ দেন ওদেতে। নিজের তত্ত্ব ‘ইকোওয়াটারনমিক্স’ নামে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে বেড়ান। সেখানে তিনভাগে জলকে ভাগ করেছেন ওদেতে। প্রথমে রয়েছে ক্লিয়ার বা পরিষ্কার জল, তারপর ক্লাউডি বা খানিকটা নোংরা জল আর শেষে সোপি বা সাবান গোলা জল। পরিষ্কার জল অবশ্যই পান করা, রান্না করা, স্নান করা সব যাবতীয় কাজকর্মের জন্য। তবে এইসব ছাড়া আর কোনও কাজে পরিষ্কার জল প্রয়োজন নেই বলেই দাবি ওদেতে-র। কাজেই সোপি এবং ক্লাউডি ধরনের জল বাড়ির অন্যান্য কাজে ব্যবহার করার কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া ওয়াটার পিউরিফায়ারও যথেষ্ট জল নষ্ট করে। কিন্তু চাইলে সেটাও আটকানো সম্ভব। এক্ষেত্রেও পুরনো জল ব্যবহারের কথাই বলেছেন ওদেতে। আর এমনটা মেনে চলতে পারলেই আগামীদিনে জল সংকট অনেকটা কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ওদেতে।