কুকিজের মধ্যেই কায়দা করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপবীতধারী এক ব্রাহ্মণের অবয়ব। এমন জিনিস কি মুখে তোলা যায়! কুকিজ বা বিশেষ এই বিস্কুট দেখে দ্বিধাগ্রস্ত অনেকেই। আবার তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রাহ্মণ কুকিজ’। দেখেশুনে তো বেজায় খাপ্পা নেটিজেনরা। কিন্তু এমন বিতর্কিত বিস্কুট বা কুকিজ কেনই বা বানাল বেকারি সংস্থা? আসুন শুনে নিই।
বিয়ে,অন্নপ্রাশন বা জন্মদিনের মতোই, ব্রাহ্মণ পরিবারে অন্যতম একটি অনুষ্ঠান হল উপনয়ন। অধিকাংশ ব্রাহ্মণ বাড়িতেই পরিবারের প্রত্যেক কিশোরের জন্য উপবীত ধারণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষেই বিশেষ ধরনের কুকিজ বা বিস্কুট তৈরি করেছে এক বেকারি সংস্থা। যার বিশেষত্ব হিসাবে কুকিজগুলির উপর ক্রিম দিয়ে এক পৈতেধারী ব্রাহ্মণের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন সংস্থার কারিগররা। আর তা নিয়েই জমেছে বিতর্ক।
আরও শুনুন: বাবা পাকিস্তানি আর মা বাংলাদেশি, সন্তানের নাম তবু রাখতেই হল ‘ইন্ডিয়া’, নেপথ্যে কী কারণ?
এই কুকিজের ছবি প্রকাশ্যে আসায় একরকম চাঞ্চল্যই ছড়িয়েছে নেটদুনিয়ায়। সংশ্লিষ্ট বেকারির তরফেই এর ছবি নেট্মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সংস্থাই এর নাম দিয়েছে ‘ব্রাহ্মণ-কুকিজ’। একইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, জনৈক গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী তৈরি এই বিশেষ কুকিজ। যে কোনও অনুষ্ঠানেই গ্রাহকের চাহিদা মতো বিস্কুট, কুকিজ বা কেক তৈরি করে সংস্থাটি। সেরকমই এক গ্রাহক তাঁর পরিবারের কারও উপনয়ন উপলক্ষে এই বিশেষ কুকিজের অর্ডার দেন। অর্ডার মাফিক কুকিজ বানিয়ে তার উপর ক্রিম দিয়ে ব্রাহ্মণের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যদিও সেই ছবিতে নির্দিষ্ট কারও মুখ বোঝা যাচ্ছে না। টিকি-উপবীত সমেত একজন ব্রাহ্মণপুরুষ পিছন ফিরে দাঁড়ালে ঠিক যেমনটা দেখাবে, এই কুকিজের উপরে থাকা ছবিটিও ঠিক তেমনই। বেকারি সংস্থাটির দাবি, প্রথমবার এমন অভিনব জিনিস তৈরি করেছে তারা। তাই খুবই উৎসাহিত হয়ে নেটদুনিয়ায় এই কাজের ছবি প্রকাশ করেছিল তারা।
এদিকে কুকিজের উপর ব্রাহ্মণের অবয়ব এবং কুকিজের নাম দেখেই বেজায় বিরক্ত হয়েছেন নেটিজেনরা। বিস্কুটের মাধ্যমে যে ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রচার করা হয়ছে, এমনকী জাতিভেদের মতো প্রথাকেও ঘুরিয়ে সমর্থন করা হচ্ছে, এমনটাই মত তাঁদের। অধিকাংশ নেটিজেনের সাফ বক্তব্য, খাবারের কোনও জাতপাত হয় না, তাই ‘ব্রাহ্মণ কুকিজ’ নামটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যদিও এ বিষয়ে বেকারি সংস্থার দাবি, কাউকে এই কুকিজ কেনার জন্য জোর করা হচ্ছে না। নিজেদের একটা কাজের ছবি মাত্র প্রকাশ করেছিল সংস্থা; এরপর জিনিসটি কেনা বা না-কেনা পুরোপুরি ক্রেতার ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর নির্ভর করছে।
আরও শুনুন: ‘আপনি গরিব, আমিও কাল থেকে কিছু খাইনি’, চুরির পর মিষ্টি দোকানের মালিককে চিঠি চোরের
বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার ৭৫ বছর কেটে গেলেও দেশ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুছে যায়নি জাতিভেদ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ ভেদ যথেষ্ট প্রকট। এখনও দেশের বহু মন্দিরে ঢুকতে বাধা পান দলিতরা। তারই মাঝে এমন ব্রাহ্মণ কুকিজের ছবি স্বাভাবিক ভাবেই আপত্তিকর মনে হয়েছে নেটিজেনদের কাছে। আর এ নিয়ে বেকারি সংস্থাটিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা। তবে এটা যে নিছকই একটা অর্ডারি কাজ, জাতিভেদকে কোনও ভাবে সমর্থন করা হচ্ছে না, সে-কথা বোঝানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে ওই সংস্থাটির কাছে।
Anyone up for freshly-baked Brahmin cookies? pic.twitter.com/3c8mudDcPc
— ah, see… (@chippdnailss) January 27, 2023