বিয়ের খরচ যে আকাশছোঁয়া তা বলাই যায়। তবে, এক্ষেত্রে কার্পণ্যের ছায়া মাত্র নেই। কিন্তু এত খরচ আসে কোত্থেকে? গৌরী সেন বলে তো আর সত্যিই কেউ নেই। দেখা যাচ্ছে, বিগ ফ্যাট ওয়েডিং-এর খরচ জোগাতে রীতিমতো আজীবনের সঞ্চয় ভেঙে ফেলতেও কেউ পিছপা নন।
লাগে টাকা তো দেবে গৌরী সেন। তা বলে কি বিয়ের খরচে কাটছাঁট করা যায় নাকি! জমজমাট বিয়েতে পাড়াপড়শির চোখ ধাঁধিয়ে দিতে না পারলে আর বিয়ে কীসের! ফিলহাল সময়ের বিয়েবাড়ির মোদ্দা কথা যেন এইটাই। আর তাই বিয়ের খরচ বেড়েছে লাফিয়ে। সমীক্ষা বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের গড় খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা।
নাহ্, এর কমে নাকি বিয়ে জৌলুস মনমতো হচ্ছেই না। দু’জন মানুষ বা দুই পরিবারের বন্ধন হলেও, বিয়েয় খরচখরচা নতুন কিছু নয়। সকলেই চান, সাধ্যের একটু বাইরে গিয়েই বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। তবে, সাম্প্রতিক অতীতে সেই খরচের মাত্রা বেড়েছে অনেকখানি। এমনকী গত বছরের তুলনায় এই খরচের হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, এখন বিলাসবহুল বিয়ের খরচ মোটামুটি সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকা। সাধারণ বিয়ের ক্ষেত্রেও কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করেন অন্তত ৪০ শতাংশ যুগল।
আরও শুনুন: নগ্ন হয়ে বিয়ে করাই রীতি, পোশাক পরা মানা অতিথিদেরও
ডেস্টিনেশন ওয়েডিং আজকালকার ফ্যাশন। এক সময় শুধু সেলেবরাই সেদিকে ঝুঁকতেন। আজকাল খরচ জোগাড় করে অনেকেই সে পথে হাঁটছেন। দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে গড় খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা। এরকম বিয়ের ক্ষেত্রে কাপলরা সবসময় যে বিদেশেই যাচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। দেশের মধ্যেই বাছা বাছা জায়গায় গিয়ে বিয়ে সারছেন অনেকে। গোয়া, কেরল, রাজস্থান ডেস্টিনেশনের তালিকায় শীর্ষে। অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের বিয়ের খরচ ১ কোটির অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলছে। তবে, এত খরচ হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু এ ধরনের বিয়ের সংখ্যা কমছে না। ভারতীয় বিয়ের ২৫ শতাংশই এখন ডেস্টিনেশন ওয়েডিং।
সব মিলিয়ে বিয়ের খরচ যে আকাশছোঁয়া তা বলাই যায়। তবে, এক্ষেত্রে কার্পণ্যের ছায়া মাত্র নেই। কিন্তু এত খরচ আসে কোত্থেকে? গৌরী সেন বলে তো আর সত্যিই কেউ নেই। দেখা যাচ্ছে, বিগ ফ্যাট ওয়েডিং-এর খরচ জোগাতে রীতিমতো আজীবনের সঞ্চয় ভেঙে ফেলতেও কেউ পিছপা নন। ধরা যাক,বছর দশেক চাকরির পর কেউ বিয়ে করছেন। এক্ষেত্রে তিনি যাবতীয় সঞ্চয় ঢেলে দিচ্ছেন বিয়েতে। এমনকী বিলাসবহুল বিয়ের জন্য পারিবারিক সঞ্চয়েও হাত দিতে দ্বিধা করছেন না অনেকে। যার যাঁদের সে সঙ্গতি নিই, তাঁরা ঝুঁকছেন ঋণের দিকে। সেই ঋণের বোঝা যথেষ্টই। তবু বিয়ের জৌলুস অক্ষুণ্ণ রাখতে মোটা ঋণের ফাঁদে জড়াতেও দ্বিধা করছে না তরুণ প্রজন্ম।
আরও শুনুন: ‘বিয়ে করা বেকার সময় নষ্ট!’ প্রকাশ্যেই বলে ফেললেন জাভেদ, কিন্তু কেন?
বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাওয়ার বাসনা হয়তো ভুল নয়। আগেও মানুষ যা চাইতেন, এখনও তা চাইছেন। কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মোটামুটি একটা সামঞ্জস্য ছিল। আজকাল কি সেই গণ্ডিই ভেঙে গিয়েছে! সেলেব বা ধনিক শ্রেণির বিয়ের যে ছবি সাধারণ মানুষ দেখেন, তাই-ই কি প্রভাব ফেলছে গড় বিয়েবাড়িতে! আর তাই সাধ্যের বাইরে গিয়ে বা ঋণ নিয়ে হলেও জৌলুসে মন দিচ্ছেন সকলে? সামাজিক স্ট্যাটাস রক্ষার ক্ষেত্রে হালফিলের বিয়েবাড়ি কি তবে শাঁখের করাত হয়ে উঠেছে! খরচের অঙ্কের পাশাপাশি এ প্রশ্নও কিন্তু থেকেই যায়।